সারা বাংলা

পাকা ফলের ঘ্রাণে মন মাতোয়ারা

জ্যৈষ্ঠ মাস শেষের দিকে। গাছে গাছে হরেক রকমের ফল। হবিগঞ্জ জেলার চারিদিকে পাকা ফলের ঘ্রাণে যেনো মন মাতোয়ারা। বিক্রেতারা হরেক রকমের ফল কিনে এনে বিক্রি করছেন। ক্রেতারাও ফল কিনছেন। দেখে মনে হবে, স্থানে স্থানে ফলের মেলা বসেছে। 

বিশেষ করে হবিগঞ্জ জেলার বিশাল অংশজুড়ে থাকা পাহাড়ি এলাকায় ফল চাষ হচ্ছে। পাহাড় ছাড়াও জেলার গ্রামগুলোতে নানা রকম ফল চাষ হয়ে থাকে। এসব ফল কিনতে ক্রেতারা এখন বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। স্থানীয় হাট-বাজারে ফলের রাজা কাঁঠাল, লিচু, আনারস, জাম ও আম পাওয়া যাচ্ছে। পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, জেলা শহর, বাহুবলের মুছাই বাজার, চুনারুঘাটের চন্ডিছড়া, শায়েস্তাগঞ্জ পুরানবাজার, দাউদনগর বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে দোকানীরা লিচু, আম, আনারস, কাঁঠাল, জামসহ বিভিন্ন রসালো ফল বিক্রি করছেন। এসব ফল ক্রয় করছেন লোকজন। তবে ফল কেনার আগে কোন প্রকার কেমিক্যাল রয়েছি কিনা তা নিয়েও কথা বলতে শুনা যায়। ক্রেতাদের কাছে পাহাড়ি ফলের কদর বেশি। এছাড়া হবিগঞ্জে স্থানীয়ভাবে চাষকৃত ফল ছাড়াও দেশের নানা স্থান থেকে আসা ফলও পাওয়া যাচ্ছে। 

কথা হয় জেলার বাহুবল উপজেলার মুছাই বাজারে লিচু কিনতে আসা হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা সোহেল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ফল কিনছি। বাচ্চারা লিচু ফলটি খেয়ে খুব স্বাদ পায়। আমরা অনেক খেয়েছি। এখন বাচ্চাদের সময়। 

তিনি আরও বলেন, পাহাড়ের আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রায় ১২ মাসই কোন না কোন ফল চাষ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম কাঁঠাল, লিচু, আনারস, লেবু, পেঁপে, আম, জাম, জাম্বুরা, কমলা ও মাল্টা রয়েছে। পাহাড়ি ফলে কেমিক্যাল দেওয়া হয় না, বিধায় এসব খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যায়।  

এক শ্রেণির অসাধু বিক্রেতা বেশি মূল্যে বিক্রি করতে ফলে কেমিক্যাল প্রয়োগ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাকে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। তাহলে আর কেমিক্যালমুক্ত ফল নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না বলেও জানান তিনি।

হবিগঞ্জ শহরে রাস্তার পাশে বসা লিচু বিক্রেতা আরজু মিয়া বলেন, পাহাড়ে গাছ কিনেছি। সেখান থেকে লিচুগুলো বিক্রির জন্য এখানে নিয়ে আসি। একশ লিচু ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাহাড়ি ফলের কথা জানতে পেরে ক্রেতারাও কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। 

শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর বাজার এলাকার লিচু বিক্রেতা ইদ্রিছ আলী বলেন, মিরপুর ও মুছাই বাজারের আড়ৎ থেকে পাইকারিভাবে লিচু কিনে এনেছি। কেমিক্যালমুক্ত লিচু বলে সবাই কিনছেন। এখানকার লিচু ছাড়াও মুকন্দপুর এলাকা থেকেও ক্রয় করা হয়। তবে হবিগঞ্জের পাহাড় ও সমতল এলাকার লিচু ক্রেতাদের কাছে বেশি জনপ্রিয়।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, মাধবপুর, চুনারুঘাট উপজেলায় রয়েছে পাহাড়। এ পাহাড়ে বারোমাসি ফল চাষ হচ্ছে। তাই ক্রেতারা পাহাড়ি ফল ক্রয়ে আগ্রহ বেশি। পাহাড়ের ন্যায় জেলার সমতল এলাকায়ও হরেক রকমের ফল চাষে সফলতা আসছে।

তিনি আরও বলেন, কেমিক্যালমুক্ত ফল চাষে আমরা কৃষকদের নানাভাবে উৎসাহ দিচ্ছি। তাতে কাজ হচ্ছে। আগের চেয়ে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বেশি পরিমাণে ফল চাষ হচ্ছে। হবিগঞ্জের ফল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানাস্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। এখন চারিদিকে পাহাড়ি ফলের ঘ্রাণ।