সারা বাংলা

নষ্ট হচ্ছে বাসক পাতা, সংগ্রহে নেই উদ্যোগ

সুফল প্রকল্পের আওতায় শেরপুরের গারো পাহাড়জুড়ে তৈরি করা হয়েছে ভেষজ চিকিৎসায় বাসক পাতার বাগান। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও বাসক গাছ থেকে পাতা সংগ্রহের কোন উদ্যোগ নেই বনবিভাগের। 

বাগানের অংশিজনদের দাবী, সঠিক সময়ে পাতা সংগ্রহ না করার ফলে ঝরে পড়ছে পাকা পাতা। মূল্যবান এই ঔষধি গাছের পাতার প্রচুর চাহিদা থাকলেও নিলাম প্রক্রিয়ার জটিলতায় হচ্ছে না বিক্রি। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পাহাড়ে বসবাসকৃত অতি নিম্ন আয়ের মানুষেরা। 

তাদের দাবি, কষ্ট করে নিজের সন্তানের মতো গাছ লালন পালন করার পরেও ঝরে পড়ছে পাতা। যদিও দ্রুতই নিলামের মাধ্যমে বাসক পাতা সংগ্রহ শুরু হবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। 

গত ৯ জুন (রোববার) দুপুরে শ্রীবরদী উপজেলার বালিঝুড়ি রেঞ্চ এর আওতার বিভিন্ন বাগানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ যেনো দেশের কোন এক চা বাগানের দৃশ্য। ভেষজ চিকিৎসায় বাসক পাতার বাগান পাহাড়জুড়ে ছেয়ে গেছে। উঁচুনিচু পাহাড়ে যেন সবুজে ঢেউ খেলছে। যারা বাসক পাতা চেনেন না তারা চোখ বন্ধ করে বলে দিবে এটা চা বাগান। তবে অনেক গাছের নিচে ঝড়ে পরে আছে পাকা পাতা। কিন্তু এই পাতাই তো এক একটা টাকার নোট। দীর্ঘ তিন বছরের অধিক সময় পার হলেও পরিপক্ক বাসক গাছ থেকে পাতা সংগ্রহের কোন উদ্যোগ না নেয়ায় বনবিভাগকে দুষছেন স্থানীয়রা।

বাগানের অংশীজনরা জানান, একটি গাছ থেকে বছরে তিনবার পাতা তোলা যায়। শুকানোর পর একটি গাছ থেকে কয়েক কেজি পাতা পাওয়া যায়। এক কেজি শুকনা পাতার মূল্য ৫০ টাকার উপরে। একবার চারা গাছ লাগানো হলে বহু বছর পর্যন্ত সেই গাছ থেকে পাতা পাওয়া যায়। সঠিক সময়ে পাতা সংগ্রহ না করার ফলে ঝড়ে পরছে পাকা পাতা। গাছ লাগানোর ৬ মাস কিংবা ১ বছর পর থেকেই পাতা সংগ্রহ শুরু করা গেলেও তিন বছর পরেও তোলা হচ্ছে না পাতা। ফলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। 

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় গারো পাহাড়ের তিন রেঞ্জে ৬ হাজার ৫শ ৮০ একর জমিতে সুফল বাগান করে বন বিভাগ। এতে রোপণ করে দেশীয় বৃক্ষ, ফল ও ঔষদিসহ ৬০ প্রজাতির প্রায় ৫০ লাখ গাছ। এর আওতায় ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থ বছরে বালিজুড়ি, রাংটিয়া ও মধুটিলা রেঞ্জের আওতায় ২৪৫ হেক্টর জমিতে বাসক পাতার গাছ লাগানো হয়। 

বাংলাদেশ ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, আমরা পাহাড়ে বসবাস করি। আমাদের অনেকেই এসব বাগানের অংশিজন। বাসকের পাতা দিয়ে দেশের নামকরা ওষুধ কোম্পানিগুলো কাশির সিরাপ তৈরি করছে। এভাবে পাতা নষ্ট না করে বিক্রি করলে স্থানীয়রা লাভবান হবেন। 

ময়মনসিংহ বন বিভাগের বালিজুড়ি রেঞ্জ অফিসার মো. সুমন মিয়া জানান, দ্রুতই নিলামের মাধ্যমে পরিপক্ক বাসক গাছ থেকে পাতা বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হবে।