হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে গাজীপুরের কালীগঞ্জের পিপুলিয়া বিলে বাঁধ তৈরি করে সেখানকার কৃষি জমিতে বালু ভরাট করছে ‘বাংলা মার্ক’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
এ এলাকার খাল-বিল, নদী-পুকুর, কৃষি জমি-জলাশয় ভরাট এবং অবৈধ দখলের ব্যাপারে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ একটি রিট আবেদনের শুনানি করেন।
শুনানিতে বলা হয়, কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল, নদী-পুকুর, কৃষি জমি-জলাশয় ভরাট এবং অবৈধ দখলের উপর স্থিতাবস্থা জারি করা হলো। আদালতের ওই নির্দেশ অমান্য করেই বাংলা মার্কসহ বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানি কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি ও জলাশয় ভরাট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
বিলটি স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকায় একাধিকবার জেলা উপজেলা প্রশাসনের জেল-জরিমানার আওতায় এসেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও এসব কাজে যুক্ত শ্রমিকেরা। তবুও বারবার তারা চোরাগোপ্তা পথে চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে।
এদিকে, আদালতের নির্দেশের বিপক্ষে গিয়ে কৃষি জমি ধ্বংসকারী প্রতিষ্ঠান বাংলা মার্কের পক্ষ নিয়ে বিল ভরাট চলমান রাখার জন্য নাগরী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আশফিয়াক মো. খালিদের নেতৃত্বে মানববন্ধনের চেষ্টা করেছেন স্থানীয় কয়েকজন নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকালে নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশফিয়াক মো. খালিদের নেতৃত্বে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য কোহিনূর বেগম মর্জিনা, সাবেক সদস্য মো. আবুল বাশার শ্যামপুরী, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আলম সরকারসহ ভাড়া করা বহিরাগত কিছু লোকজন নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের চেষ্টা করে। তবে দাবিটি অনৈতিক এবং অবৈধ হওয়ায় মানববন্ধন করার সুযোগ দেয়নি জেলা প্রশাসক। ওই কার্যালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট তাদের সেখানে অবস্থান করতে দেননি।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পিপুলিয়া মৌজার বাংলাদেশ রেলওয়ের রেল লাইনের উত্তর পার্শ্বের কৃষি জমিগুলো থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করে বালু দিয়ে ভরাট করছে বাংলা মার্ক। জমিগুলো পার্শ্ববর্তী বেলাই বিলের সাথে সংযুক্ত। বর্ষাকালে বিলের পানি দিয়ে কৃষি জমির সেচ কাজ ও মাছ চাষের কাজ চলে। বাংলা মার্ক বাঁধ নির্মাণ করে বিলের কৃষিজমিতে বালু ভরাট করলে স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
তারা জানান, বাঁধ নির্মাণ ও বালু ভরাটের ঘটনার সুরাহা চেয়ে জেলা প্রশাসাকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। প্রশাসনের লোক আসার খবরে তারা পালিয়ে যায়। লোক চলে গেলে আবার শুরু হয় বালু ভরাটের কাজ। এভাবে প্রশাসনের সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলে ইতোমধ্যে বিলের বেশ খানিকটা জায়গা ভরাট করে ফেলেছে বাংলা মার্ক।
অনতিবিলম্বে বিলের এই বালু ভরাট বন্ধ না হলে হুমকির মুখে পড়বে জীব-বৈচিত্র ও পরিবেশ। মৎস্য ও কৃষি জমির সংকটে পড়বে স্থানীয় মৎস্যজীবি ও কৃষকরা।
ইউপি সদস্য আসফিয়াক মো. খালিদ বলেন, ‘আমরা হাউজিং গ্রুপের বিরুদ্ধে। তবে কোনো ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে নই। এলাকায় ফ্যাক্টরি হলে জনগণের উন্নয়ন হবে। তাই জনগণের সাথে ফ্যাক্টরির জন্য মানববন্ধনে নেতৃত্ব দিয়েছি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে আসফিয়াক মো. খালিদ বলেন, ‘ডিসি স্যার আমাকে যখন ডেকে বলেছেন এই জায়গা ভরাটের অনুমতি নেই। তখন আমরা চলে এসেছি। ডিসি স্যার এখানে বালু ফেলতে নিষেধ করেছেন।’
বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘বর্ষাকালে পানি যেখানে জমা হয়, বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল বা জলাশয় এ ধরনের জায়গা ভরাট করা যাবে না। যারা এসব ভরাট কাজে সহযোগিতা করে, তারা টেকসই বাংলাদেশের বিপক্ষে কথা বলছে। আর টেকসই বাংলাদেশ যারা চায় না, তারা বাংলাদেশের শত্রু।’
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নয়ন মিয়া বলেন, ‘আমার বদলী হয়েছে ঈদের পরই আমি চলে যাব এখান থেকে। তবে এ বিষয়টির ব্যাপারে আমাদের সচিব স্যার, ডিজি স্যার জানেন। স্যারেরা আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’
বাংলা মার্কের পরিচালক ইরফান বাপ্পি বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের দাবি এ এলাকায় ফ্যাক্টরি হোক। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী লোক এতে কৌশলে বাধা দিচ্ছেন। তাই স্থানীয়দের উন্নয়নের স্বার্থে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় মেম্বারদের নেতৃত্বে মানববন্ধন করা হয়।’
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তারা লোকজন ভাড়া করে এনে আমার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের জন্য দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। পরে আমার ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছে। তারা দুষ্ট লোক, ব্লাকমেইল করার জন্য এসেছিল। ওই মানববন্ধনের নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্যরা। তাদের নাম ও তথ্য নিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’