সারা বাংলা

‘কালকে ঈদ, আজ বাড়ির আঙিনায় ঢলের পানি’

‘কালকে ঈদ আর আজকে আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় ঢলের পানি। গত দুই দিন ধরে এই অবস্থা। বাচ্চাদের নিয়ে খুব ভয়ে আছি। কারণ ছোট ছেলেটা মাত্র হাটা শিখছে, যেকোনো সময় পানিতে পড়ে যেতে পারে। তাই সারাদিন চোখে চোখে রাখতে হচ্ছে। পানির জন্য ঘর থেকে বের হতে পারছি না, তাই কোনো কাজও পাচ্ছি না। ঈদে পরিবারের জন্য কিছুই কিনতে পারিনি। তিন ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’ - আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন উজানের ঢল ও বৃষ্টিতে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়া শ্রমিক শাহনুর মিয়া।

শাহনুর মিয়া সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা। সরেজমিনে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সড়ক তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া পানির চাপে কোনো কোনো স্থানে সড়ক ও নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।

রোববার (১৬ জুন ) সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া দোয়ারাবাজারে সুরমা, চেলা, চিলাই, খাসিয়ামারাসহ সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার থেকে পাহাড়ি ঢল নামা শুরু হয়। এতে দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন যায়গায় সড়ক ও নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েকটি গ্রাম। দুর্ঘটনা এড়াতে নদী তীরবর্তী লোকজন বসতবাড়ি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন।

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিক আলমেদ বলেন, বাংলাদেশের উত্তরের সর্ব শেষ উপজেলা দোয়ারাবাজার। আমাদের উপজেলা থেকে ভারত এত কাছে যে, পাহাড়ের ঢলে নামার ৪ ঘণ্টার মধ্যে নদ-নদী ভরে আশপাশে প্লাবিত হয়। এতে আমরা সবসময় ভোগান্তির মধ্যে থাকি।

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পুকুরের মাছ ও সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছি।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহের নিগার তনু বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে যাদের বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে। সেই তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকারি সাহায্য আসলে তাদের দেওয়া হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আজ শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানি বিতরণ করা হবে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ঢল নেমেছে। এতে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। দোয়ারাবাজারের নদীভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করব।