গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। বর্তমানে পানি কিছুটা কমে এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা।
শনিবার (২২জুন) রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, কাউনিয়ার তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল থেকেই পানি কমতে শুরু করেছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢল না আসলে এই নদীর পানি দুই-একদিনের মধ্যে অনেক কমবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা নদী বেষ্টিত কাউনিয়া উপজেলার গদাই এলাকার অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছেন। ঝুঁকিতে রয়েছে পাশ্ববর্তী পীরগাছা ও গংগাচড়ার এলাকার আরও শতাধিক পরিবার। ভাঙন রোধে নিজ খরচে অনেককেই বালুর বস্তা ফেলতে দেখা গেছে নদীতে। অনেককে বাড়ির মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিতেও দেখা গেছে।
ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখনো তাদের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সরকারকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ নদীর দক্ষিণ তীরে সুরক্ষিত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
গদাই এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েক দফা নদীতে ভেঙে গেছে বাড়িঘর। এবার ভাঙলে আর কিছুই থাকবে না। বাধ্য হয়ে বাঁধের ওপর অথবা অন্য কোথাও স্থান নিতে হবে।
মোজাফফর আলী বলেন, ‘প্রতি বছর বাড়িঘর ভাঙে নদীতে। এমন করে কী আর টিকে থাকা যায়। ছেলে-মেয়েরা এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে বলে। বাপের ভিটা ছাড়তে মন চায় না।’
এদিকে, চরের ঢুষমারা, তালুক শাহবাজ, গদাই, পূর্ব নিজপাড়ার অংশ, গোপীডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, চর প্রাননাথ, শনশনিয়া, চর হয়বতখাঁ, চর গনাই, আজমখাঁর চরের নিম্ন এলাকায় পানি উঠতে শুরু করেছে। আমন ধানের বীজতলা ও উঠতি বাদাম খেত পানিতে ডুবে গেছে। অর্ধ শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে নতুন নতুন এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
কাউনিয়ার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ থেকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। একদিকে উজানের নেমে আসা পানি অন্যদিকে বৃষ্টি, দুই মিলিয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে। তিস্তা আর আগের জায়গায় নেই। গতবছর উজানের ঢলের সঙ্গে পলিমাটি এসে প্রায় এক ফুট উঁচু হয়ে গেছে তিস্তার তলদেশ। যার ফলে, নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই এই পানি মুহূর্ত দক্ষিণ তীরের নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করে। পাশাপাশি দেখা দেয় ভাঙন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বালাপাড়ার ঢুসমারার চর, গদাই এলাকার কিছু নিম্নাঞ্চলে বর্ষা এবং তিস্তার পানি প্রবেশ করেছে। গত দুই দিন থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় এই পানি এখন কমতে শুরু করেছে। পানি কমলেও তিস্তা দক্ষিণ তীর কাউনিয়ার গদাই এলাকার কিছু জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এই এলাকার যোগাযোগের ছোট রাস্তা সেটিও ভেঙ্গে গেছে। আমরা স্থানীয়ভাবে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।’