সারা বাংলা

বিয়ে বাড়িতে লাশের মিছিল, শোকে আনন্দ ম্লান 

বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া এলাকার সেলিম মাহমুদের ছেলে ডা. সোহাগের বাড়িতে শনিবার (২২ জুন) সকাল থেকে চলছিল কনেপক্ষকে বৌভাত খাওয়ানোর আনন্দ আয়োজন। হঠাৎ খবর আসে কনেপক্ষের যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস ও একটি অটোরিকশা হলদিয়া ব্রিজ ভেঙে খালে পড়ে গেছে। তারা ছুটে এসে দেখতে পায় ঘটনাস্থলে নিহত নয় জনের লাশ। মুহূর্তে আনন্দ শোকে পরিণত হয়। 

দুপুরে আমতলী উপজেলার হলদিয়া-চাওড়া সড়কে হলদিয়া খালের ওপরে লোহার সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস পানিতে পড়ে যায়। এতে নারী-শিশুসহ নয় জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নয় জনের নিহতের ঘটনায় বর ডা. সোহাগ ও কনে হুমায়রার বাড়িতে শোক নেমে এসেছে। 

আমতলী উপজেলা কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ মনিরের মেয়ে হুমায়রা আক্তারের সঙ্গে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমতলী পৌরশহরের খোন্তাকাটা গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মাহমুদের ছেলে ডা. সোহাগের বিয়ে হয়। শুক্রবার (২১ জুন) ওই কনেকে বরের বাড়ি তুলে আনেন। শনিবার (২২ জুন) মেয়ের পক্ষের লোকজন মাইক্রোবাস এবং অটোরিকশায় বরের বাড়িতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে হলদিয়া সেতু পার হওয়ার সময় মাঝের অংশ ভেঙে যায়। এতে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা খালে পড়ে যায়। অটোরিকশার যাত্রীরা সকলে সাঁতরে কিনারে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা পানিতে তলিয়ে যায়। 

প্রত্যক্ষদর্শী নাশির উদ্দিন জানান, তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা ওই মাইক্রোবাসে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। ততক্ষণে নয় জন মারা যায়।

আরও পড়ুন: বিয়ের যাত্রী নিয়ে সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে, নিহত ৯

নিহতরা হলেন, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সাহাপাড়া গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য মাহাবুবুর রহমান সবুজের ভাই সোহেলের স্ত্রী রাইতি (৩০), শাশুড়ি রুমি বেগম (৭০), মা ফরিদা বেগম (৭০), মামি মুন্নি বেগম (৪০), তার সন্তান তাহিয়া (৭), তাসদিয়া (১১) ও আরেক মামি ফাতেমা বেগম (৪০)। এছাড়া আমতলী উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া এবং মেয়ে রিদি (৫) নিহত হয়। এরা কনে হুমায়রার মামা বাড়ির আত্মীয়-স্বজন।

সন্ধ্যায় সরেজমিন বর ডা. সোহাগের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সুনসান নীরবতা। খাবার পড়ে আছে। কনের বাড়িতে কান্নার রোল। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন: খালে মাইক্রোবাস: নিহতদের ৭ জন একই পরিবারের 

বরের বাবা সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘এমন দুর্ঘটনায় আমি হতভম্ব। কনে পক্ষের লোকজনের জন্য সকল আয়োজন ছিল কিন্তু সব কিছু তছনছ হয়ে গেল।’ কনের বাবা মাসুম বিল্লাহ মনির বলেন, ‘আমার কিছুই বলার নেই। আমি শ্বশুর বাড়ির মানুষকে কী জবাব দেবো? বিয়ে বাড়ি হবার কথা ছিল আনন্দের। এখন দুটি পরিবার শোকে স্তব্ধ।’ 

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, নিহতদের তিনটি শিশু ও নয় জন নারী। নিহতের পরিবারকে সহায়তা করা হবে। 

আরও পড়ুন: সেতু ভেঙে ৯ জনের মৃত্যু: ঠিকাদারের শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ