সারা বাংলা

যমুনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ছোট-বড় বোয়াল

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জের যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ ফুলজোড়, করতোয়া, বড়াল ও হুড়া সাগর নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে যমুনা নদী ও চলনবিলের নদ-নদী ও খাল বিলে এসেছে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রচুর পরিমাণে ছোট বড় বোয়াল মাছ। উৎসবের আমেজে জাল, জুইতা ও টেঁটা দিয়ে সেসব বোয়াল ধরছেন সৌখিন ও পেশাজীবী মাছ শিকারিরা ।

রোববার (২৩ জুন) সকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনা নদীর তীরবর্তী সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, এনায়েতপুর, শাহজাদপুর, চৌহালী উপজেলাসহ চলনবিল এলাকার বিভিন্ন এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা পড়ছে।

এদিকে, মাছ ধরে শিকারিরা খুশি হলেও সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, ডিমওয়ালা এসব মাছ ধরায় মাছের বংশ বৃদ্ধি হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে।

মাছ শিকারিরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর কাঁঠালিয়া হিজুলিয়ায় এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট, বড় বোয়াল মাছ ধরা পড়ছে। এ মাছগুলোর মধ্যে অধিকাংশ মাছ ৫ থেকে ৭ কেজি ওজনের। ঝাঁকে ঝাঁকে বোয়াল মাছ ধরা পড়ার খবরে নদীপাড়ে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। মাছগুলো দরদাম করতে থাকেন। পেশাজীবী শিকারিরা মাছ বিক্রি করলেও সৌখিন শিকারিরা বিক্রি করছেন না।

চৌহালী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাজেদুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাতে আমরা ১০ জন শখের বশে যমুনা নদীর খাষপুকুরিয়া এলাকায় বোয়াল মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। মাছ ধরার সরঞ্জামাদি জাল ও ছোরা নদীতে পাতার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ৩ থেকে ৬ কেজি ওজনের ১০টি বোয়াল মাছ ধরা পরে। সেই মাছ সবাই ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছি।

এদিকে, তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের হামকুড়িয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, চলনবিলে বন্যার নতুন পানি প্রবেশ করায় নদ-নদী ও খাল বিলে পানিতে ভরে যাচ্ছে। এই পানিতে ডিম ছাড়ার জন্য মা বোয়াল মাছ কম পানিতে এসে লাফালাফি করছে। এই সুযোগে পেশাদার ও সৌখিন মাছ শিকারিরা দলবেঁধে প্রতিদিন এসব জায়গা থেকে ছোট বড় বিভিন্ন ওজনের বোয়াল মাছ ধরছেন। শনিবার সকালে শ্যামপুর গ্রামের আশিকুর রহমান নামে একজন মাছ শিকারি ৯ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ ধরেন। মাছটি তিনি ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন।

একই উপজেলার হামকুড়িয়া পশ্চিমপাড়ার সৌখিন মাছ শিকারি জুলমাত হোসেন বলেন, আজ সকালে তাড়াশ উপজেলার ৮ নম্বর ব্রিজ এলাকার একটি খাল থেকে ১০ কেজি ওজনের ৩টি ডিমওয়ালা বোয়াল মাছ ধরা পড়ে। ২টি বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। বাকিটা বাড়িতে নিয়ে যাই।

ফুলজোড় নদীতে মাছ ধরতে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, ৫ জন শখের বশে নদীতে মাছ ধরতে এসেছি। জাল, ফছকা (মাছ ধরার সরঞ্জাম) নিয়ে ওত পেতে থাকি। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ৮টি বোয়াল ধরা পড়ে। 

চৌহালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর হাসান মজুমদার বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন নদ-নদীর মাছ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় এখন পর্যাপ্ত মাছ ধরা পড়ছে। তবে শিকারিদের ডিমওয়ালা মা মাছ না ধরার জন্য পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, মা মাছ ধরলে মাছের বংশ বৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ডিমওয়ালা মা মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মা মাছ নিধনের বিরুদ্ধে শিগগিরই চলনবিল এলাকায় মৎস্য শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর মাছ সংরক্ষণের জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ পদক্ষেপের কারণেই এখন যমুনা নদীতে বোয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের বড় বড় মাছ ধরা পড়ছে। তিনি ডিমওয়ালা মাছ না ধরার জন্য সৌখিন ও পেশাজীবী মাছ শিকারিদের পরামর্শ দেন।