সারা বাংলা

খুলনায় ধীরে ধীরে হেলে পড়ছে ৪ তলা ভবন, ঝুঁকিতে কয়েকটি পরিবার

খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আলীর ক্লাব সংলগ্ন হাজী তমিজউদদীন রোডস্থ দারুল আমান মহল্লার ব্যবসায়ী অরুন সাহার মালিকানাধীন চার তলা ভবন ধীরে ধীরে হেলে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে ভবনটি প্রায় ১৮-২০ ইঞ্চি হেলে পড়ে উত্তর দিকের (পেছনে) একটি টিনসেড বাড়িতে ঠেকে আছে। ইতোমধ্যে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) ভবনটির নকশা বাতিল করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে, এই ভবনটি অপসারণের জন্য প্রায় ৫ বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দারা খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। দীর্ঘদিনেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাডাঙ্গাস্থ ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলীর ক্লাব সংলগ্ন হাজী তমিজউদদীন রোডস্থ দারুল আমান মহল্লা এলাকাবাসীর পক্ষে শামীম বিন মাহফুজ, খালিদ বিন মাহফুজ ও মো. তৌফিক বিন মাহফুজ ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কেডিএ বরাবর পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগপত্রে তারা উল্লেখ করেন, স্থানীয় বানরগাতি মৌজার ৩২/৩-ক নম্বর হোল্ডিং’র চার তলা ভবনের মালিক অরুন সাহা চার তলার নকশা অনুমোদন নিয়েও তা লঙ্ঘন করে বিল্ডিং কোড (ইমারত নির্মাণ বিধিমালা) না মেনে ইচ্ছামতো গলির মধ্যে একটি পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ করেন। যা নির্মাণের পরপরই পেছনের দিকে ঝুঁকতে থাকে। 

এলাকাবাসী জানান, প্রথম দিকে ৩-৪ ইঞ্চি হেলে পড়ে ভবনটি। সেসময় এলাকাবাসী এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। অভিযোগ করার পর কেডিএ অবৈধভাবে নির্মিত পঞ্চম তলার সামান্য অংশ (আংশিক) অপসারণ করে দেয়। তাতেও ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত হয়নি। ক্রমান্বয়ে ভবনটি পেছনের দিকে ঝুঁকছে। ইতোমধ্যে ভবনটি প্রায় ১৮-২০ ইঞ্চি হেলে পড়েছে। ফলে ভবনটির আশপাশের কয়েকটি পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চার তলা ভবনটিতে কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে। দেয়ালে ফাঁটলের একাধিক চিহ্নও রয়েছে। যদিও ভবনটি ফাঁটলের অংশগুলো সিমেন্ট-বালুর প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পেছনের দিকে হেলে পাশ্ববর্তী টিনসেডের ঘরের উপর ভর করেছে ভবনটি। 

ভবনের পাশে বসবাসরত সকিনা বেগম বলেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির মালিক অরুন সাহা। ভবনটির অবস্থা খুবই খারাপ। ভবনটি পেছনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে প্রায় ১৮-২০ ইঞ্চি। ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটিতে অনেক লোকের বসবাস থাকলেও দেখার কেউ নেই। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। 

কেডিএ’র বিল্ডিং ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ভবনটির মালিক অরুন সাহা চার তলার নকশা অনুমোদন নিয়েছিলেন। তিনি পরে পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে নোটিশ করে ভবনটি ‘ঝুঁকিমুক্ত’ করতে বলা হয়। একই সঙ্গে এ ধরণের সংশ্লিষ্ট কোনো কনসার্টিং প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ সার্টিফিকেট কেডিএতে জমা দিতে বলা হয়। তিনি শুধুমাত্র পঞ্চম তলার খেলাপী অংশ অপসারণ করেন। এছাড়া কনসার্টিং প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ সার্টিফিকেট তিনি জমা দেননি। ফলে প্রায় বছর খানেক আগে তার ভবনের নকশা বাতিল করা হয়। পরবর্তী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে ভবন মালিককে ডেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। 

ভবনটির মালিক অরুন সাহা নকশা বহির্ভূত পঞ্চম তলা নির্মাণের কথা স্বীকার করে জানান, কেডিএ’র সঙ্গে আপোষ করে বর্ধিত অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। কনসার্টিং প্রতিষ্ঠান থেকে ভবনটি ‘ঝুঁকিমুক্ত’ সার্টিফিকেট কেডিএতে জমা দেননি তিনি। এমনকি তার ভবনের নকশা বাতিলের বিষয়টিও জানা নেই বলেও উল্লেখ করেন ব্যবসায়ী অরুন সাহা।