সারা বাংলা

বিজয়নগর থানার ৩ পুলিশের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যের লিখিত অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার ও ফৌজদারি অপরাধ সংগঠিত করায় বিজয়নগর থানার তদন্ত কর্মকর্তা, ফাঁড়ির ইনচার্জ ও এসআই’র বিরুদ্ধে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল ভূঁইয়া।

এরআগে গত ২৭ মে দুপুর ১২টার দিকে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল ভূঁইয়াকে পুলিশ সদস্যরা মারধর করেছে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।

জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ছতরপুর গ্রামের মো. আব্দুল হক ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বরাবরও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হাসান জামিল খান, এসআই পিযুষ কান্দি দে, উপজেলার চম্পকনগর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মো. রবিউল ইসলাম।

লিখিত অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে অতীতে এনআই অ্যাক্টের অধীনে সিআর মামলা ছিল। এ মামলায় বিজ্ঞ আদালতে হাজির হয়ে জামিন লাভ করি এবং বিজ্ঞ আদালত থেকে পরোয়ানা রিকল পেপার সংগ্রহ করি। উক্ত পরোয়ানা রিকলের পেপার বিজয়নগর থানার নিকট জমা দেই এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুল ইসলাম বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত আছেন। আমার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা-মোকদ্দমায় কোনো গ্রেপ্তারি পরায়ানা নেই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয় এই যে, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হাসান জামিল খান, বিজয়নগর থানাধীন চম্পকনগর পুলিশ ক্যাম্পে দায়িত্বরত এসআই রবিউল ইসলাম এবং বিজয়নগর থানায় কর্মরত এসআই পীযুষ কান্তি দে গত ২৭ মে দুপুর ১২টায় আমার বাড়িতে এসে আমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে বলে মৌখিকভাবে আমাকে জানায়। কিন্তু কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। তথাপি আমাকে জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে চাইলে আমি বিজ্ঞ ১ম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত কর্তৃক ইস্যুকৃত পরোয়ানা রিকল দেখালে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হাসান জামিল খান আমার পরিহিত শার্টের কলার ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন, নাকেমুখে চড়-থাপ্পর মারেন। থানায় নিয়ে শেষ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অঢেল টাকার মালিক নাছিমা মুকাই আলীর পক্ষে কাজ না করে কেনো আল জাবেদের নির্বাচন করেছি; আল জাবেদের ‘আনারস’ প্রতীকের নির্বাচনি কাজ করবার স্বাদ মিটিয়ে দিবে বলার সঙ্গে সঙ্গে চম্পকনগর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. রবিউল ইসলাম তার হাতে থাকা পিস্তলের বাট দিয়ে আমার কপালে সজোরে উপর্যুপরি আঘাত করলে তৎক্ষণাৎ আমার কপাল ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। তখন থানার এসআই পীযুষ কান্তি দে তাহার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে আমাকে আহত করে এবং আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য উদ্যত হয়। তার সঙ্গে থাকা অজ্ঞাতনামা অন্যান্য পুলিশ সদস্যগণ আমার বসতঘরে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং ওয়ারড্রবের তালা ভেঙে ২৫ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। আমার বৃদ্ধ বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য লোকজন ও আশেপাশের প্রতিবেশীগণ আমার জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসলে উক্ত পুলিশ সদস্যগণ আমার বৃদ্ধ বাবা মো. আব্দুল হক ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় এবং আমাকে মো. আল জাবেরের ‘আনারস’ প্রতীকের নির্বাচনের সকল প্রকার প্রচারণা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য শাসিয়ে যায়।

এসআই মো. রবিউল ইসলাম হুমকি প্রদান করে বলেন, ভবিষ্যৎ পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে। পুলিশ চলে গেলে আমার আত্মীয় ও প্রতিবেশী শফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন আমাকে আহত অবস্থায় স্থানীয় বিজয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করায়। আমি উপরে উল্লেখিত পুলিশ সদস্যগণ কর্তৃক ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে থানার ওসি আসাদুল ইসলামকে জানালে তিনি নীরব ভূমিকা পালন করেন। জেলার পুলিশ সুপারের হোয়াটস্অ্যাপে আমার রক্তাক্ত ছবি এবং ডাক্তারি প্রমাণপত্র পাঠালেও তিনি উল্লিখিত দায়ী ও অপরাধী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

উল্লেখ্য, চম্পকনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই মো. রবিউল ইসলাম উক্ত ঘটনার পর হইতে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আমি, আমার পরিবারভুক্ত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং আমার রাজনৈতিক অনুসারীগণকে নানারকম ফৌজদারী মামলায় আসামি শ্রেণীভূক্ত করে নির্যাতনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করছে। তার দ্বারা আমি এবং আমার সহিত সংশ্লিষ্ট নিরাপরাধ ব্যক্তিবর্গ যেকোনো সময় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে ফৌজদারী মামলায় আসামি হিসেবে সীমাহীন নির্যাতনের আশঙ্কা করছি। আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পরপর দুইবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত স্থানীয় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান। আমি একজন সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে কোনো প্রকার প্রতিকার না পেয়ে একান্ত নিরুপায় হয়ে আপনার নিকট ন্যায় বিচারের আশায় এই দরখাস্ত দাখিল করলাম।

আরও পড়ুন: বিজয়নগরে পুলিশের বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যানকে মারধরের অভিযোগ