সারা বাংলা

ঝুঁকি জেনেও পাহাড়ে বাস

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে কয়েকদিন ধরে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই এখানে দেখা দেয় পাহাড় ধসের শঙ্কা। মৃত্যুর ঝুঁকি জেনেও পাহাড়ের পাদদেশে বাস করছেন হাজারো মানুষ। 

ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের পাহাড়ি এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করতে দেখা গেছে প্রশাসনকে। পাশাপাশি পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় রাঙামাটি জেলায় ২৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসন। যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখা, স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা, বন্যাকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে খাবার পাঠানোর প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে তারা। 

এদিকে, রোববার থেকে ভারী বর্ষণে জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় কাচালং নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যে কোনো সময় নিচু এলাকাগুলোতে পানি প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে ওই এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার।

তিনি বলেন, ‘যারা নদী তীরবর্তী এলাকায় আছেন তাদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। উপজেলায় ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

রাঙামাটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘রোববার (৩০ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৯. ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’

রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরের ২৯টি এলাকাকে ঝুকিঁপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। রাঙামাটি পৌর এলাকায় ২৩টি ও সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রাঙামাটি শহরের রুপনগর এলাকার সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাকিব হোসেন বলেন, ‌‘ভারী বর্ষণের কারণে জেলা প্রশাসন থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য।’

শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা মো. শামীম বলেন, ‘সরকার যদি আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার পর আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করে তাহলে অবশ্যই যাবো। সবাইতো জীবনের নিরাপত্তা চায়। আমরা এখানে ঝুঁকি নিয়ে আছি। কী করবো? আমরা নিরুপায়।’

শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা ও মাদরাসা পাড়ার সভাপতি মো. সোহেল বলেন, ‘আজ সকালে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী ও কাউন্সিলর রবি মোহন চাকমা আমাদের এলাকায় আসেন। তারা লোকজনদের বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্রে ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করেন। আমরা চেষ্টা করবো সবাইকে সন্ধ্যার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে বেশিরভাগ লোক আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। বিশেষ করে ঘরের জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে। আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের সমস্য হওয়ার কারণেও অনেকে যেতে চান না।’ 

ভেদভেদীর লোকনাথ মন্দির এলাকার আবুল কালাম বলেন, ‘বৃষ্টি হলে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। প্রশাসন ও এলাকার লোকজন বলছেন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য। এখনো পরিস্থিতি ভালো দেখছি, তাই যাচ্ছি না।’

রাঙামাটি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রবি মোহন চাকমা বলেন, ‘পৌর মেয়রসহ আমরা পৌরসভার এলাকার বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বার বার গিয়ে লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য অনুরোধ করছি। প্রশাসন থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’  

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক  মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘প্রাণহানি এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে আনতে আমরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করছি। উপজেলাগুলোতেও একই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে টিম গঠন করেছি। যে কোনও দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা একসঙ্গে কাজ করবো।’