বন্যার কারণে সিলেটের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ বিদ্যালয় দুর্গতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকিগুলো পানিতে নিমজ্জিত। ফলে ঈদের পরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুললেও কার্যত পাঠদান হয়নি।
সিলেটে প্রথম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় গত ২৯ মে। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ৮ জুনের পর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। বন্যার দ্বিতীয় ধাক্কা আসে গত ১৬ জুন। সেদিন আবার পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা বন্যার কবলে পড়ে। পরে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকাসহ জেলার ১৩টি উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে ১৭ জুন থেকে সুনামগঞ্জ জেলায় ফের বন্যা দেখা দেয়। পরে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় তা বিস্তৃত হয়।
গত ২৫ জুন থেকে সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হতে শুরু করে। এর মধ্যেই গত সোমবার থেকে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়ে আবার বন্যা পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করে। ফলে চলতি বছরে টানা তিন দফা বন্যার কবলে পড়ে সিলেট।
বন্যার কারণে সড়ক, কৃষি, মৎস্য, অবকাঠামোসহ নানা খাতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে সিলেটে জেলা। সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও সিলেট জেলা শিক্ষা অফিসগুলো জানিয়েছে, ৫ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানির কারণে বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিখন ঘাটতি কমাতে ঈদ ও গ্রীষ্মের ছুটি কমিয়ে ২ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৬ জুন থেকে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান শুরু হয়। সিলেটের অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঈদের পর আর পাঠদান শুরু হয়নি। ৩ জুলাই থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুললেও পাঠদান হয়নি।
জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, সিলেট জেলায় ৩৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে ৭৮টি। এছাড়া কয়েকটি কলেজে পানি উঠে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানি বিস্তৃতির সঙ্গে স্কুল-কলেজ বন্ধের সংখ্যাও বাড়ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, জেলার মোট ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯৮টিতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৩৭টি, বিশ্বনাথে ২টি, বালাগঞ্জে ৫৫টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩২টি, গোলাপগঞ্জে ২৭টি, বিয়ানীবাজারে ৫৪টি, জকিগঞ্জে ২৩টি, কানাইঘাটে ৪টি, জৈন্তাপুরে ৩টি, গোয়াইনঘাটে ২টি, কোম্পানীগঞ্জে ৬৫টি, দক্ষিণ সুরমায় ২২টি ও ওসমানীনগরে ৭২টি বিদ্যালয় রয়েছে।
সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, বন্যার কারণে জেলায় ৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শনিবার (জুলাই) দুপুর পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ৫টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতের সংখ্যা বেড়েছে। ২০৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে অবস্থান করছেন ৯ হাজার ৪৯৩ জন মানুষ। শুক্রবার এ সংখ্যা ছিলো ৯ হাজার ৩২৯ জন। সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ নেই কেবল সিলেট সদর, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ বলেন, ৩৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬৭ টি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর বাকিগুলো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে এই সংখ্যা বাড়ছে। ওই এলাকায় পানি কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে। স্কুলগুলো যেহেতু আশ্রয়কেন্দ্র সে জন্য সেখানে আশ্রয় নিচ্ছেন বানভাসী লোকজন।
সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাইদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বন্যার কারণে জেলায় ৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয় রয়েছে ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়। কুশিয়ারা অববাহিকার এসব এলাকায় বন্যার পানি কমছেই না।
তিনি আরও বলেন, জকিগঞ্জে ডাইক ভেঙ্গে পানি ঢুকেছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভবনাও কমেছে।
আবু সাইদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। পানি কমলে বাড়তি ক্লাসের মাধ্যমে এই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ হচ্ছে। বিদ্যালয়ে পাঠদানের উপযোগী হতে একটু সময় লাগবে। কারণ বিদ্যালয়গুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ত্রান তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি. ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’