সারা বাংলা

প্রশ্নফাঁসে মামুন জড়িত, জেনে অবাক প্রতিবেশীরা 

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরমধ্যে রয়েছেন বগুড়ার মামুনুর রশিদ(৩৫)। এমন ঘটনায় মামুন জড়িত, জেনে অবাক হয়েছেন প্রতিবেশীরা।

মামুনের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাইগুনী মণ্ডলপাড়া গ্রামে। বাবার নাম মোস্তাফিজুর রহমান। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে চাকরি করতেন তিনি।

গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গছে, বাইগুনীতে মামুনদের পুরানো একটি টিনশেড বাড়ি রয়েছে। সেখানে থাকেন মামুনের বাবা-মা, ভাই-ভাবি, ছোট বোন। গত বছরের ঈদুল আজহার পর ঢাকায় যান তিনি। এর আগে রাজশাহীতে চাকরি করতেন মামুন। ঢাকা থেকে বাড়িতে এলে মামুন স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ওই বাড়িতেই উঠেন। মামুন এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামুন গ্রেপ্তার হয়েছে, বিষয়টি জেনে অবাক প্রতিবেশীরা। মামুন এমন কাজ করতে পারে বিশ্বাস করতে পারছেন না তারা। 

মামুনরা দুই ভাই। মামুনের তিন বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তার বাবা বগুড়া ড্রাগস কোম্পানিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি করেন। ছোট ভাই ফারুক চাকরি করেন বগুড়ার আদমদীঘিতে পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে।

মামুনের প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, সে (মামুন) এলাকায় থাকার সময় খারাপ কিছু দেখিনি। গত পরশু বিষয়টি জানতে পেরেছি। শুনে খারাপ লেগেছে। এতো ভালো ছেলেটা এমন কাজ করতে পারলো। 

আনোয়ার হোসানের মতো একই কথা জানিয়েছেন আজিজুল হক, দেলোয়ার হোসেন, মেহেদী হাসান, শাজাহান আলীসহ তার আরও বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী।

মেহেদী হাসান নামে একজন বলেন, মামুন ভাই আমাদের সিনিয়র। অনেক সময় খেলাধুলা করতে গেলেও বাকবিতণ্ডা, ঝগড়াঝাটি হয়। কিন্তু মামুন ভাই কখনও কারো সঙ্গে ঝগড়া ফ্যাসাদে জড়াননি। তিনি সব সময় সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। টাকার লোভে তিনি এমন কাজ করতে পারেন আমরা তো বিশ্বাসই করতে পারিনি। 

শাজাহান আলী নামে আরেক প্রতিবেশী বলেন, আজকাল তো টাকা পয়সা ছাড়া চাকরি হয় না। ধার দেনা করেই হয়তো চাকরি নিয়েছেন। এ কারণে হয়তো এমন কাজে জড়িয়েছে। তবে ধার দেনা করতেই বোধহয় সব শেষ হয়ে গেছে। বাড়িঘর তো আগের মতোই আছে। 

বাইগুনী গ্রামের সাবেক মেম্বার মো. খোকন বলেন, মামুন একান্নবর্তী পরিবারেই থাকেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এবং সম্পদ আগের মতোই রয়েছে। তারা আগে থেকেই মোটামুটি স্বচ্ছল। মামুনদের ১০ বিঘা জমি এবং গরুর খামার অনেক আগে থেকেই রয়েছে। প্রশ্নফাঁসের ঘটনা পত্রিকায় ও টেলিভিশনে দেখেছি। মামুনকে দেখে আমি তো অবাক। 

কথার এক ফাঁকে তিনি আবেদ আলীর কথা উল্লেখ করে বলেন, টিভিতে দেখলাম আবেদ আলী অনেক সম্পদ করেছে। কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। মামুন তেমন কিছু করেনি। ঢাকাতে গেছেই অল্প দিন হলো। ও হয়তো নতুন করে ওই চক্রের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলো। কম সময়ের জন্য হয়তো তেমন টাকা-পয়সা করতে পারেনি। আর এই গ্রামের বাইরে আর কোথাও তার বাড়িঘর আছে কিনা তা জানা নেই। 

রতন নামে আরেক প্রতিবেশী বলেন, গত তিন মাস আগে মামুনের সঙ্গে গাবতলীতে দেখা হয়েছিলো। একসঙ্গে বসে চা খেলাম। সব সময় তাকে তো সাদামাটাভাবেই চলাফেরা করতে দেখেছি। এমন দুর্নীতির সঙ্গে সে জড়িত থাকতে পারে এটা তো আমরা ভাবিনি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামুনের এক প্রতিবেশী বলেন, গাবতলীর হামিদপুরের মামুনের আপন ফুফাতো ভাই জেমস মামুনকে পাসপোর্ট অফিসে চাকরি নিয়ে দেন। এরপর জেমস মামুনকে ড্রাইভার আবেদ আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এরপর মামুন বাইগুনী এলাকার ৭ জন এবং বাউটুনা গ্রামের ১২ জনকে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরি দিয়েছেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছেন। মামুনের মাধ্যমেই তার ছোট ভাই পরিবার পরিকল্পনায়, তার ভাবিকে প্রাইমারি স্কুলে এবং প্রতিবেশী এক ভাতিজাকে রেলওয়েতে চাকরি নিয়ে দেন। এছাড়া, সড়ক ও জনপদ বিভাগে বাউটুনা গ্রামের ৭-৮ জনকে চাকরি নিয়ে দিয়েছেন অর্থের বিনিময়ে।

অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা দিয়ে মামুন তার এলাকায় নিজের নামে কোনো জমি না কিনলেও তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমানের নামে বাইগুনীতে ৫ বিঘা জমি কিনেছেন। এছাড়া, তার শ্বশুরবাড়ী দাড়াইল বাজার গ্রামে সম্পদ গড়েছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি। এছাড়া তিনি বলেন, মামুনের গরুর খামারে অন্তত ২৫টির মতো গরু ছিলো। গ্রেপ্তার হওয়ার ২ দিন আগে বাড়িতে এসে অন্তত ১৫টি গরু অন্যত্র সরিয়েছেন।

দুর্গাহাটা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আতোয়ার হোসেন মিন্টু বলেন, মামুনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আগে শুনিনি। 

এ বিষয়ে মামুনের পরিবারের লোকজন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।