সারা বাংলা

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেলো গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গয়না

গোপালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ব্রোঞ্জের গয়না জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি জেলার দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি অর্জন করলো। এর আগে রসগোল্লার জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছিলো। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, গত ১২ মার্চ জেলা প্রশাসক জিআই পণ্যের অন্তর্ভুক্তির জন্য বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। পরে যাচাই বাছাই করে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গয়না নিবন্ধনের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ এর ধারা ১২ অনুসারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর কর্তৃক জার্নাল প্রকাশ করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, এই স্বীকৃতি জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া ব্রোঞ্জের গহনা তৈরির সাথে সম্পৃক্ত কারিগরদের কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ব্রোঞ্জ শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। এতে এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। 

এ অর্জনে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গয়নার জিআই ভুক্তিকরণের সাথে সম্পৃক্ত জেলা প্রশাসন ও মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা এবং ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (EDC) কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

চলতি বছরের ১২ মার্চ জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার জিআই পণ্যের স্বীকৃতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে আবেদন করা হয়। এর আগে গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জেলার প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পায়। 

ব্রোঞ্জ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও জলিরপাড় ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সুভাষ বৈদ্য বলেন, আমাদের ওয়ার্ডেই ব্রোঞ্জের গয়না তৈরীর পল্লী প্রায় ১শ’ বছর আগে গড়ে ওঠে। পরে এটি সারা জলিরপাড় ইউনিয়নের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ পল্লীকে কেন্দ্র করে এখানে ব্রোঞ্জ মার্কেট হয়। তখন জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়না সুখ্যাতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে এটি বিদেশের বাজারে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু এ শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তাই সম্প্রতিকালে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ব্রোঞ্জের গয়না আমাদের বাজারের প্রায় ৫০ ভাগ দখল করে দিয়েছে। তারপরও জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়না তৈরি শিল্প সগৌরবে শতাধিক পরিবার টিকিয়ে রেখেছে। জলিরপাড় ব্রোঞ্জ মার্কেটে এখনো ৪৫টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে এখনো ব্রোঞ্জের গয়না বিক্রয় করা হয়। 

ব্রোঞ্জ গয়না প্রস্তুতকারক জলিরপাড় গ্রামের জগদীশ শীল বলেন, ব্রোঞ্জ গয়না তৈরির তামা, দস্তা ও পিতলের দাম বেড়েছে। সহজ প্রাপ্যতা কমেছে। ভারতসহ অন্যান্য দেশের ব্রোঞ্জ গয়নার রং খুব চকচকা। আমাদের গয়নার রং তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। দামী সুদৃশ্য, মনোহর ও সৌখিন গয়নার বাজার ভারত ও চীনের দখলে চলে গেছে। তাই কানের দুল, হাতের বয়লাসহ যেসব গয়নার চাহিদা রয়েছে এমন সব গয়না আমরা তৈরি করি। 

তিনি আরও বলেন, সরকার এ শিল্পকে আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও সবধরনের সহযোগিতা করলে আমরা ব্রোঞ্জ গয়নার শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবো। এখানে এখানও মান সম্পন্ন কারিগর রয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সমন্বয়ে তাদের কাজে লাগিয়ে আমরাও দামী গয়না তৈরি করতে পারি। তা হলেই শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীরা অধিক উপার্জন করতে পারবেন। এ শিল্প দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ ও গতিশীল করবে।