সারা বাংলা

কাউখালীর সুবিদপুরের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটির বিপন্ন দশা

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার চিড়াপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের সুবিদপুর গ্রামের শীতলপাটির সুনাম ছিল সারাদেশে। কিন্তু যথাযথ স্বীকৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দৃষ্টিনন্দন এ শীতলপাটির বিপন্ন দশা। দেশের  যে কয়টি জেলায় শীতলপাটি তৈরি হয় তার মধ্যে পিরোজপুরের কাউখালী অন্যতম।

শ্রুতি রয়েছে, প্রায় দুইশ’ বছর ধরে সুবিদপুর গ্রামের পাটিকররা কোনোমতে এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। 

সুবিদপুর গ্রামটির অবস্থান কাউখালী উপজেলা সদর থেকে দু’কিলোমিটার দক্ষিণে। যে গ্রামের ৬০টি পরিবার এখনো পাটি শিল্পকে তাদের বাঁচার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে রয়েছে। এখানকার  তৈরি শীতলপাটি পাইকারদের হাত ঘুরে চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী, যশোর ও খুলনা বাজারে।

স্থানীয়রা জানান, পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাউখালীর শীতলপাটির প্রশংসা করেন। তিনি তৎকালীন ইউএনও খালেদা খাতুনের কাছে জানতে চান আগের মত কাউখালীতে শীতলপাটি তৈরি হয় কিনা?

রপ্তানি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও  সৌখিন ব্যবসায়ী, বেড়াতে আসা অতিথিদের মাধ্যমে শীতলপাটি যাচ্ছে ভারত, নেপাল, ভূটান, মালয়শিয়া, ব্রিটেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক  দেশে। অনেকে আবার ঘরের শোভাবর্ধনে নকশা করা শীতলপাটি দেয়ালেও টাঙিয়ে রাখেন ।

সুবিদপুর গ্রামের রবিন পাটিকর জানান, কালের বিবর্তনে কাউখালীর পাটি শিল্প আজ বিলীনের পথে। অভাব তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাত-দিন পরিশ্রম করেও দু’বেলা দু’মুঠো আহার জোগাতে পারছেন না তারা। উচ্চশিক্ষা দূরের কথা নাম দস্তখত শেখারও সুযোগ পায় না ৭০ ভাগ শিশু।

তিনি বলেন, বাপ দাদার পেশা তাই এ পেশা ছাড়তেও পারছি না।  

পাটিকর সীমা রানি জানান, পাঁচ ফুট প্রস্থ ও সাত ফুট দৈর্ঘ্যের ভালো মানের একটি শীতলপাটি কাউখালীর বাজারে দুই হাজার থেকে দশ হাজার  টাকায় বিক্রি হয়। মধ্যম মানের একটি পাটির দাম আটশ’ থেকে বারোশ টাকা। এ ছাড়া চারশ’-পাঁচশ’ টাকায়ও কিছু শীতলপাটি মেলে। 

তিনি আরও জানান, একটি শীতলপাটি তৈরি করতে সাধারণত তিন-চারদিন লাগে। একজন বয়স্ক পাটিকর সাতদিনে একটি পাটি তৈরি করতে পারেন। গড় হিসেবে দেখা যায়, একটি পরিবারের তিন সদস্য মিলে কাজ করলেও মাসে ১০টির বেশি পাটি তৈরি সম্ভব নয়। ১০টি পাটি বিক্রি করে মাসে সর্বোচ্চ ছয়-সাত হাজার টাকা আয় হয়। এই আয়েই চলে পাটিকরদের সংসার।

জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মামুন হোসাইন বাবলু জমাদ্দার বলেন, পাটি শিল্পটি আমাদের ঐতিহ্য। তিনি এই শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখতে সমাজের সকল মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

চিরাপাড়া পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লাইকুজ্জামান মিন্টু তালুকদার বলেন, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ দেশি বিদেশি  অনেক পর্যটক শীতলপাটির এই গ্রামটি পরিদর্শনে এসেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা আশ্বাস দিয়ে বলেন, এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে যা কিছু দরকার তার জন্য আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করবো।