পুরো পরিবারের স্বপ্ন ছিলো সবার ছোট আবু সাঈদকে নিয়ে। পড়াশোনা শেষ করে সাঈদ হতে চেয়েছিলেন বিসিএস ক্যাডার। তার সেই স্বপ্ন আর কখনও পূরণ হবে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে তার বাড়ি। মকবুল হোসেন ও মনোয়ারা বেগম দম্পতির নয় সন্তানের মধ্যে সাঈদ ছিলো সবার ছোট।
সাঈদের বাকি পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে এক ভাই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। অন্যরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়েছেন। পুরো পরিবারের স্বপ্ন ছিলো তাকে ঘিরে। কিন্তু অকালে ঝরে গেলো সে স্বপ্ন। আদরের ছোট ভাইকে হারিয়ে হতভম্ব বড় ভাই রমজান।
রমজান বলেন, বাবা অনেকদিন ধরে অসুস্থ। ভাই বোনদের মধ্যে সাঈদ ছিলো সবচেয়ে মেধাবী। এজন্য পরিবারের সবার উপার্জন দিয়ে তাকে এতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে এসেছি। ওর স্বপ্ন ছিলো বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। আমাদের আশা ছিলো, একদিন সে অনেক বড় হবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। এখন তো সব শেষ হয়ে গেলো।
আদরের ছোট ছেলে আবু সাঈদের মৃত্যুর খবরে পাগলপ্রায় মা মনোয়ারা বেগম। তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
নিহত সাঈদের বোন সুমি বলেন, হামার ভাই ফাইভে বৃত্তি পাইছে, এইটে বৃত্তি পাইছে। হামার ভাই অনেক মেধাবী ছিলো। হামার ভাইকে ওরা মেরে ফেলল ক্যান। হামার ভাই বেঁচে থাকলে হামার হেরে (আমাদের) স্বপ্নপূরণ হলো হয় (হতো)।
বাবনপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, আবু সাঈদ ছিল ওই পরিবারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সব ভাইবোনের মধ্যে কেবল সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছিলো। কিন্তু শেষ সময়ে এসে সব তছনছ হয়ে গেলো।
তিনি বলেন, আবু সাঈদ যেমন মেধাবী, তেমনি নম্র ও ভদ্র ছিলো। তার মৃত্যুতে আমরা গ্রামবাসী গভীর শোকাহত।
কোটা সংস্কার নিয়ে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্রণী ভূমিকা ছিল আবু সাঈদের। সেখানে তিনি ছিলেন এই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্ররা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।