সারা বাংলা

সবুজের মৃত্যুর খবর এখনো জানেন না ভ্যানচালক বাবা

লেখাপড়ার খরচের জন্য ভ্যান বিক্রি করে ছেলে মো. সবুজ মিয়াকে টাকা পাঠিয়েছিলেন বাবা বাহরাম বাদশা (৬০)। ভ্যান না থাকায় গত বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জে রিকশা চালাতে যান তিনি। কোনো মোবাইল ফোন না থাকায় এখনো ছেলের মৃত্যুর খবর কেউ জানাতে পারেননি বাদশাকে। গোটা দেশ কোটা আন্দোলনে সবুজের মৃত্যুর খবর জানলেও এখনো জানে না তার বাবা।

ঢাকা কলেজের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন মো. সবুজ আলী। কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে নিহত হন তিনি।

ছেলের মৃত্যুর খবরে মা বিলাপ করতে করতে কান্না করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও করছেন বিলাপ। সবুজ মিয়ার বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বাংলা বাজার এলাকায়। 

বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সবুজের মা সূর্যবানু অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে কান্না করছেন। তিনি ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে পড়ালোখ করতেন শুধুমাত্র সবুজ। তাকে হারিয়ে এখন দিশেহারা পুরো পরিবার। 

সূর্যবানু বলেন, ‘সবুজকে পড়ালেখা করানোর জন্য ওর বাবা ভ্যান বিক্রি করে দিয়েছেন। ভ্যান না থাকায় তিনি মানিকগঞ্জে রিকশা চালাতে গেছেন। তিনি মাঝেমধ্যে ফোন করে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। তার সঙ্গে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই সবুজের বাবাকে এখনো জানাতে পারিনি ছেলের মৃত্যুর খবর। তিনিও ফোন দেননি।’ 

এলাকাবাসী কাওছার ইসলাম বলেন, ‘সবুজের পরিবার খুবই গরিব। সবুজ ছোট থেকেই খুব মেধাবী ও ভদ্র স্বভাবের ছিল। তাই তাকে সবাই সহযোগিতা করতে ও পছন্দো করতো। সবুজের মৃত্যুতে এলাকাবাসী তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সবুজের বাবা মানিকগঞ্জে রিকশা চালান। তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারিনি। মোবাইল ফোন না থাকায় যোগাযোগের কোনো মাধ্যম জানা না থাকায় তাকে তার ছেলের মৃত্যুর তথ্য আমরা দিতে পারিনি।’

সবুজের বন্ধু রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছোট বেলায় একসঙ্গে খেলাধুলা করেছি। পড়ালেখা করেছি। সবুজ ভালো ছাত্র হওয়ায় সে ঢাকায় পড়ালেখা করতো। তার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় এলাকার সবাই তাকে সহায়তা করতো।’

এদিকে, সবুজের মৃত্যুতে নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগ আজ দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেখানে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখেন- নীলফামারী সদর আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।  তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশি-বিদেশি অনেকেই ষড়যন্ত্র করছেন। তারা দেখছেন, কিছু শিক্ষার্থী ভুল বুঝে আন্দোলন করছে। তারা এটাকে পুঁজি করে ছাত্রদের উস্কে দিচ্ছে।