সারা বাংলা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধ-সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক আহত

সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে কুমিল্লায় পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা।

পূর্বঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ী এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অনবরত রাবার বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করতে থাকে পুলিশ সদস্যরা। জবাবে শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকাল ৬টায় টার দিকে এ প্রতিবেদক লেখার সময় পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে দেখা গেছে। পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসে অন্তত অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে মহাসড়কের দুই লেনে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বিজিবির একটি ভারি যান, পুলিশের দুটি ভ্যান জ্বালিয়ে দিয়েছে। কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় বেশ কিছু দোকানপাট ভাংচুর করা হয়। বিকালে পুলিশের পাশাপাশি মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের হটাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থা নেয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিক্ষোভে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ, জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এ সময় ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আমি কে, তুমি কে, রাজাকার রাজাকার' ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেবো রক্ত,’ ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দিবো না,’ ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই,’ ‘মেধা না কোটা, মেধা মেধা,’ ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, ‘আমরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছি। পুলিশ নির্বিচারে আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পুলিশের এত বাধার পরও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে। যত বাধাই আসুক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ 

তিনি বলেন, ‘ছাত্রসমাজের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরও সরকার কোটা সংস্কার সমাধানের চেষ্টা করেনি। আমরা এর চূড়ান্ত সমাধান চাই। আমরা চাই, অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম ৫ শতাংশে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে। কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’ 

এর আগে মিছিল নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহাসড়কের দিকে অগ্রসর হয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বড় একটি মিছিল কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ সড়ক হয়ে মহাসড়কের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। তাদের মধ্যে ছাত্রী ও অল্পসংখ্যক ছাত্রকে পুলিশ সামনের দিকে অগ্রসর হতে দেয়। বাকি ছাত্ররা জালুয়াপাড়া, ধনপুরসহ বিভিন্ন সড়ক হয়ে মহাসড়কে দিকে অগ্রসর হয়। 

বৃহস্পতিবার মহাসড়কে দূরপাল্লার বাসসহ কোনো গাড়ি চলছে না। স্বল্পপাল্লার কিছু মাইক্রোবাস মহাসড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন জানান, আন্দোলনের নামে কোনো দুষ্কৃতকারী যাতে মহাসড়কে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেই বিষয়টি লক্ষ্য রাখছে পুলিশ। আমাদের প্রায় ১০ জন পুলিশ আহত হয়েছে।