সারা বাংলা

আত্মসমর্পণ করছে কারাগার ভেঙে পালানো কয়েদীরা

কোটা সংস্কার আন্দোলেনের সময় নরসিংদী কারাগার ভেঙে পালানো ৮২৬ জন কয়েদীর মধ্যে ৩৩১ জন ইতোমধ্যে নিজ নিজ আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। 

বুধবার (২৪ জুলাই) নরসিংদী জেলা কারাগারে জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

এর আগে শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ছদ্মবেশে দুর্বৃত্তরা নরসিংদী কারাগারে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কয়েক হাজার মানুষ একযোগে হামলা চালায়।

নরসিংদী জেলা কারাগারের জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা প্রথমে জেলের মূল ফটক ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। পরে জেলারের বাসভবনে ভাঙচুর করে আগুন দেয়। একে একে ব্যারাক, হাজতি ওর্য়াড, কম্বল গুদাম, রসদগুদামে আগুন দেওয়ার পর কারাগার ভাঙতে শুরু করে। সব কয়টি কয়েদখানা ভেঙে সাধারণ কয়েদী থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সবাইকে বের করে নিয়ে যায়। এর মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাতজন জঙ্গি ও জেএমবির দুজন নারী জঙ্গি ছিল। ওই সময়ে এক হাজার রাউন্ড গুলি ও ৮৫টি অস্ত্র লুট করে নেয় দুর্বৃত্তরা।’

সুনিল বিশ্বাস নামে এক প্রক্ষদর্শী বলেন, ‘যে দৃশ্য দেখেছি তা খুবই ভয়াবহ। হাজারের উপর মানুষ জেলা কারাগারে হামলা চালায়। হাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র। তারা কারাগারে আগুন দেয়। আসামিরা আনন্দ মিছিল করতে করতে কারাগার থেকে বের হয়। এই কাজ কখনও শিক্ষার্থীরা করতে পারে না।’

অপর প্রত্যক্ষদর্শী আয়ুব হাসান বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের মধ্যে সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করে এই নাশকতা করেছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তারা আবারও ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।’

নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস ও লুটপাটে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। ৩৩১ জন্য কারাবন্দী গ্রেপ্তার হয়েছে। ১ হাজার ৮৫ রাউন্ড গুলি ও ৩৯টি অস্ত্র ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে।’

নরসিংদী জেলা প্রসাশক বদিউল আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। দোষীদের দ্রুতই শনাক্ত করা হবে। আসামিদের ধরিয়ে দেওয়া এবং অস্ত্র উদ্ধারে সাহায্যকারীকে ৫০ হাজার করে টাকা পুরষ্কার দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।’

এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) জেলা কারাগার পরিদর্শনে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘কারাগারে আগুন দেওয়া এবং আসামি পালাতে সহায়তা ছাত্রদের কাজ না। এটা ছাত্ররা করেনি। ছাত্রদের আন্দোলনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি-জামায়াত ফায়দা লুটছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার সকল পদক্ষেপ নেবে।’  

কারাগার পরিদর্শনকালে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘সরকারি স্থাপনা এভাবে ধ্বংস করা হবে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। জেল থেকে পালানো আসামি ও লুটহওয়া অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চলছে। তদন্ত করে যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’