সারা বাংলা

দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির পাহারা

শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠে। এরপর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির পাহারা দিচ্ছেন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

শরীয়তপুর

লাঠি হাতে ৪ জন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তাদের প্রত্যেকের পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবির ওপর সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক। হাতে বাংলাদেশের পতাকা। পোশাকে অঙ্কিত রয়েছে ‘ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন’ এবং দলীয় প্রতীক ‘হাতপাখার ছাপ’।

মঙ্গলবার  (৬ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে আংগারিয়া মাধব মন্দির ও কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্যরা প্রধান গেটে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। এ সুযোগে নাশকতাকারীদের কেউ কেউ হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এ অবস্থায় শরীয়তপুরের আংগারিয়া এলাকার শ্রী শ্রী রাধা মাধব মন্দির ও শ্রী শ্রী কালি মন্দির রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন শাখার ওই চার সদস্য। এ সময় বাংলাদেশের পতাকা হাতে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সামনে তাদের সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

জানতে চাইলে মন্দির রক্ষার দায়িত্বে থাকা ও সদর থানা ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সহ-সভাপতি বেলায়েত বলেন, এ দেশ আমাদের সবার। আমরা হিন্দু মুসলমান ভাই ভাই। কেউ যাতে তাদের উপাসনালয় ভাঙতে না পারে, সেজন্য আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। 

মন্দির রক্ষার দায়িত্বে থাকা সেলিম বলেন, বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির পাহারা দেওয়া হচ্ছে। আমরা বাঙালি সবাই ভাই ভাই। দেশের এই মুহূর্তে কোনো মহল সংখ্যালঘুদের বাড়িতে কিংবা মন্দিরে যাতে হামলা করতে না পারে সে জন্য আমরা পাহারায় বসেছি।

স্থানীয় বাসিন্দা দীপ্ত নাগ বলেন, আমাদের শরীয়তপুর জেলাটি সম্প্রীতির বন্ধনে যুক্ত। পূজার সময় আমরা সবাই আনন্দ করি। তাদের ঈদেও দাওয়াতে যাই। বর্তমানে তাদের এই উদ্যোগটি প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা একসঙ্গে সবসময় এভাবেই থাকতে চাই। 

এ বিষয়ে জানতে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সভাপতি রাসেল মিয়া বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেকটি থানায় মন্দির রক্ষায় টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া আমাদের কোনো হিন্দু ভাই ডাকলে তাদের পাশে আমাদের কর্মীরা থাকবে। আমরা চাই আমাদের এ দেশের সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকুক। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সামনে তাদের সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

কিশোরগঞ্জ

দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিশোরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির পাহারা দিচ্ছেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। জেলা শহরের মন্দিরগুলোতে সোমবার (০৫ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে সারা রাত পাহারায় ছিলেন তারা। এশা ও ফজরের সময় মন্দিরের পাশেই খোলা জায়গায় জামাত আদায় করেন দলের কর্মীরা।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদেশে মন্দির বা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় তাদের পাশে দাঁড়ান জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। শহরের সব মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেন দলটির নেতারা। 

এ বিষয়ে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রমজান আলী বলেন, আমরা নেতা-কর্মীদের আশপাশের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছি। তাঁদের মনে সাহস দিতে বলেছি। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশে জামায়াত রয়েছে। দলটি মনে করে, সংখ্যালঘু বলে দেশে কিছু নেই, সবাই দেশের নাগরিক। আমরা শহরের সকল মন্দির পরিদর্শন করেছি। তাঁদের আশ্বাস দিচ্ছি, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশে আমরা রয়েছি। হিন্দু-মুসলিম আমরা সবাই ভাই ভাই, এ দেশেরই নাগরিক।

শহরের বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলী। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা নাজমুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সাবেক অর্থ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, শহর জামায়াতের আমির আনোয়ার হোসাইন, সহকারী সেক্রেটারি আবু নাঈম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক জেলা সভাপতি আনোয়ারুল হক, ছাত্রশিবির জেলা উত্তর শাখার সভাপতি শাহরিয়ার মাহমুদ শাকিল, সেক্রেটারি মোজাহিদ বিল্লাহ, অফিস সম্পাদক নেয়ামত উল্লাহ, অর্থ সম্পাদক ঈসা মিয়া প্রমুখ। 

এ সময় জামায়াত-শিবিরের নেতারা মন্দিরের পুরোহিতদের আশ্বস্ত করেন বলেন, তাদের ওপর কেউ হামলা করতে পারবে না। জামায়াতে ইসলামী তাদের পাশে রয়েছে। যে পর্যন্ত দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে তারা মন্দির পাহারায় থাকবেন।