সারা বাংলা

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করতে পারলো না রায়হান

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে গত সোমবার অন্য শিক্ষার্থীদের মতো মো. রায়হানও (১৮) যান আনন্দ মিছিলে যোগ দিতে। রাজধানীর বাড্ডাতে মিছিল করার সময় মাথায় ও পিঠে গুলি এসে লাগে তার। মিছিলে থাকা অপর শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মারা যান তিনি। রায়হান এ বছর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

নিহত রায়হান নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গানগর গ্রামের আমজাদ হাজী বাড়ির মো. মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

বুধবার (৭ আগস্ট) রায়হানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল মা আমেনা খাতুন। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমার রায়হান কই? আমার বুকের ধন দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। কতো স্বপ্ন নিয়ে তোকে ঢাকায় পড়ালেখার জন্য পাঠিয়েছি। ছেলে আমাকে আর মা বলে ডাকবে না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’

রায়হানের পারিবার জানায়, রায়হান এ বছর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তার বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন বাড্ডার একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের চাকরি করেন। রায়হান পাশেই একটা মেসে থাকতেন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে রায়হান ছিলেন বড়।

রায়হানের বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘বাড্ডা এলাকায় গোলাগুলির খবর পেয়ে রায়হানকে ফোন করি। তার ফোন অন্য একটি ছেলে ধরে। সে বলে আঙ্কেল রায়হানকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার কথা শুনেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যায়। সেখানে গিয়ে আমার ছেলের মরদেহ পাই। এবার আমার ছেলে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। ওর আর পরীক্ষা দেওয়া হলো না। আনন্দ মিছিলে যাওয়ায় তার কাল হলো।’

রায়হানের চাচা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘রায়হান মেসে জোহরের নামাজ পড়ছিলো। নামাজ পড়ে সে মেসের বাইরে গিয়ে দেখে বিজয় মিছিল হচ্ছে। সে ওই মিছিলে যোগ দেয়। মিছিলটি বাড্ডার থানার সামনে গেলে পুলিশ গুলি চলায়। গুলি এসে রায়হানের পিঠে ও মাথায় বিদ্ধ হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রায়হান। শিক্ষার্থীরা তাকে একটা ভ্যানে করে হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই সব শেষ।’

নোয়ান্নই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ বলেন, ‘রায়হানের বাবাকে আমি  চিনি। আমি জানি তিনি ঢাকায় চাকরি করেন। তার ছেলের অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।’