দীর্ঘ ১৫ বছর পর গাইবান্ধা জেলা বিএনপি অফিসে নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে আসতে পারেন এমন সংবাদে নেতাকর্মীর মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণার পরপরই শহরের সার্কুলারে রোডে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে শান্তি মিছিল বের করেন। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) তারা দলীয় কার্যালয়ে কর্মসূচি পালন করেন এবং বুধবার (৭ আগস্ট) কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সেই থেকে শহরের সার্কুলার রোডে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে দোয়া, বিজয় মিছিল, বিজয় মঞ্চ স্থাপন, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত শত নেতাকর্মী দলে দলে জড়ো হতে থাকে। এ সময় পুরো এলাকা নেতাকর্মীদের স্লোগান স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। নেতাকর্মীদের আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন, আজ যেন তারা স্বাধীন দেশ পেয়েছেন। খুব আনন্দ লাগছে। এত বছর হাসিনা সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনে তারা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। হামলা-মামলা দিয়ে আটকানো হয়েছে। আজ মনে হচ্ছে, নতুন ভাবে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন।
শহর বিএনপির আহ্বায়ক শহীদুজ্জামান শহীদ বলেন, ‘বহু দিন পর বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে আজ প্রাণ ফিরে এসেছে। দীর্ঘদিন আমরা অফিসে আসতে পারিনি। আমাদের অফিস একাধিকবার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। অফিসের দেয়াল ছাড়া এখন কিছু নেই। অসংখ্য নেতাকর্মী মামলা-হামলার শিকার হয়েছে। আজ আমরা স্বাধীন। আমরা নতুন করে রাজনীতি শুরু করবে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।’
সদর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মোর্শেদ হাবিব সোহেল বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর জালিম শাসকের হাতে দেশ পরিচালিত হয়েছে। বহু নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আমার মা মারা গেছে, আমি মাটি পর্যন্ত দিতে আসতে পারিনি। ছাত্র সমাজ, সাধারণ জনগণ ও দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।’
বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো ধর্ম-বর্ণের সাধারণ মানুষের উপর যেন আঘাত না আসে, সেই দিকে সবাই সার্বক্ষণিক নজর রাখছে বলে জানান তিনি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। আমরা ভেঙে যাওয়া অফিসে এখন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। নেতাকর্মীরা অফিসে আসা শুরু করেছেন। তারা সবাই উজ্জীবিত এবং উচ্ছ্বসিত। আমরা সবাই মিলে সুন্দর গণতান্ত্রিক দেশ গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’
জেলা ছাত্রদল সভাপতি জাকারিয়া আলম জিম বলেন, ‘সরকার পতনের পর সারা দেশে যে লুটপাট হয়েছে, তার সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত নয়। কোথাও লুটতরাজ হলে আমরা তা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করেছি। সংখ্যালঘু ও তাদের উপাসনালয়ের উপর যাতে হামলা না হয়, সেই ব্যাপারে ছাত্রদলের নেতাকর্মী পাহারায় আছে।’
তার নাম ভাঙিয়ে কেউ কোথাও অনৈতিক সুবিধা নিতে চাইলে সরাসরি তাকে অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করার আহ্বান জানান তিনি।
২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংকট তৈরি হয়। সেনাবাহিনীর সমর্থনে এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। ড. ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে সরকার প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতা লাভ করে। এরপর থেকে টানা তিন মেয়াদে তারা ক্ষমতায় ছিল। চতুর্থ মেয়াদের ছয় মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর আন্দোলনের মুখে সরকারের পতন হয়।