হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থান রচিত হয়েছে দেশের ছাত্র জনতার দৃঢ় ঐক্যের মাধ্যমে। এই ঐক্যে যেভাবে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ছিল, একইভাবে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ায়-হাটহাজারী থেকে রহমানিয়ায় আমাদের মাদ্রাসার ছাত্ররাও হাতে হাত রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে এক অটুট বন্ধন তৈরি করেছিল। স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার বহু সময় ধরে চেয়েছিল জাতির মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও তারা রাজাকার রাজাকার নাম দিয়ে এদেশের মানুষদের দাবিয়ে রাখা ষড়যন্ত্র করেছিল। আমরা সকলে এখন ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু এই ঐক্যের পতন ঘটাতে স্বৈরাচারী আ.লীগ এখনো চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদের উৎখাত এবং স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে পরিনত হয়। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতার মর্যাদা পেয়েছে।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বাদ জুম’আ নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোড এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে দোয়ার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপস্থিত ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন।
এরপর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে সমস্ত ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাত এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের আশু সুস্থতা কামনায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মামুনুল হক বলেন, এই আন্দোলনের প্রধান কথা ছিল, যেটা ৭১’র মুক্তিযোদ্ধাদের শ্লোগান ছিল বৈষম্য এবং অবিচার রোধ করা। বৈষম্যের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই ২০২৪ সালেও ছাত্র-জনতা অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান সম্পাদন করেছে।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থান দুই রকমের হয়, সামরিক অভ্যুত্থান ও গণঅভ্যুত্থান। আমরা কোন সামরিক অভ্যুত্থান করিনি, বাংলাদেশের মানুষ এবার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের যাঁতাকল থেকে দেশকে, মানুষকে, জাতিকে মুক্ত এবং স্বাধীন করেছে।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্যকে উৎখাত করার জন্য বিভেদের যত দেয়াল আছে সেগুলোকে ভেঙে দিতে হবে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন সেই কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে। সমাজকে নানা শ্রেণিপেশায় যেভাবে বিভক্ত করে রেখেছি, নিজেদের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তৈরি করে রেখেছি, যে কারণে আমরা সেই দেয়ালগুলো উতরে এক কাতারে দাঁড়াতে পারি না। আর এ কারণেই জালিমশাহীরা সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে সুযোগ পায়।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ফয়জুল্লাহ সন্দ্বীপি, মুফতি বশিরুল্লাহ, মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী প্রমুখ ।
এ সময় আন্দোলনের স্মৃতিচারণ ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান, থানা সমন্বয়ক মো. জাবের, তৌহিদুল ইসলাম, আবু সাঈদ মো. নাঈম, চিটাগাং রোডের প্রধান সমন্বয়ক নাজমুল ইসলাম, সহ-সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম সুজন, দারুননাজাত শাখার প্রধান সমন্বয়ক আলী হাসান, মামুন প্রধান নিলয়, নুর আলম, শারমিন আক্তার, উর্মি, রূপালী, সিয়াম, তাফাজ্জুল হক, হাবিবুল্লাহ, সাবরিনা রহমান সোহা ও দারুননাজাত শাখার সহ-সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।