সারা বাংলা

হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী মিছিল

হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং জড়িতদের বিচার, ক্ষতিপূরণ ও নৈরাজ্যের অবসান চেয়ে বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

রোববার (১১ আগস্ট) দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন, মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।

বগুড়া:  রোববার দুপুর ১২টা থেকে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সনাতনী জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। 

কর্মসূচিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা ডা. এনসি বাড়ই, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য দিলীপ কুমার দেব, সংগঠনের বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্মল রায়, পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ, জাতীয় ক্রীড়াবিদ গোপাল তেওয়ারিসহ অসংখ্য নেতাকর্মী ও বগুড়ার ১২টি উপজেলার সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

গোপালগঞ্জ: চলমান সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মানবন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মিলিত সংগ্রামী সনাতনী সমাজের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

রোববার উপজেলার ভাঙ্গারহাটের চৌরাস্তা থেকে তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে হাতে হাত ধরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ মানববন্ধনে সনাতন ধর্মের হাজার হাজার নারী পুরুষ বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশে সকলে মিলিত হন।

অ্যাডভোকেট নিখিল দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাবেক যুগ্ম সচিব ড. সমীর কুমার বিশ্বাস, কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেব দুলাল বসু পল্টু, সাদুল্লাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সমর চাঁদ মৃধা খোকন, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লক্ষী রানী সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ফরিদপুর: দেশজুড়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, মন্দির ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার বেলা সাড়ে ৩টায় ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে সনাতন ধর্মাবলম্বীর বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এই প্রতিবাদ সভা ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

অনতিবিলম্বে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রতিবাদে নামেন তারা।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির, প্রতীমা, হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।

এ সময় অ্যাডভোকেট মানিক কুমার মজুমদার, ছাত্রনেতা দীপ্র রাজ কুন্ডু, সাগর রায় প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বরগুনা: দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের প্রতিবাদসহ আট দফা দাবিতে বরগুনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হিন্দু সম্প্রদায়। 

এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দ্রুত হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচার এবং আট দফা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

রোববার (১১ আগস্ট) বিকাল ৪টায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

উপস্থাপিত দাবি সমূহ:

১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। ২. অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে। ৩. ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করা। ৪. হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা। ৫. দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করা। ৬. প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করা। ৭. সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করা। ৮. শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দেওয়া।

মাগুরা: দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর চালানো হামলা, হুমকি ও নীরব চাঁদাবাজি, অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদে মাগুরা শহরের চৌরাঙ্গী মোড়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

রোববার (১১ অগাস্ট) বিকেলে মাগুরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহর ঘুরে আবার চৌরাঙ্গী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

এতে যোগ দেন জেলা সদরসহ তিন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সনাতন ধর্মের মানুষ। বিক্ষোভে সনাতন ধর্মলম্বলীরা বিভিন্ন অসাম্প্রদায়িক ও দাবি তুলে ধরে বিভিন্ন স্লোগান লেখা  প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন। পরে দেশব্যাপী হিন্দুদের উপর আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য দেন।

সাতক্ষীরা: দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও চাঁদাবাজি বন্ধ এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা শাখা, ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চা নামের তিনটি সংগঠন এ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে।  

রোববার বিকালে  শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে সমাবেশ মিলিত হয়। 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস নাথ ঘোষের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা মন্দির সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সোমনাথ ব্যানার্জি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখা সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন শীল, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার আহ্বায়ক অমিত কুমার ঘোষসহ অন্যান্যরা।

নরসিংদী:  দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, লুটপাট, নির্যাতন বন্ধের দাবি বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে নরসিংদী সনাতন ধর্মাবলীদের বিভিন্ন সংগঠন।

বিকেল ৫টার দিকে পৌরসভা মোড় এলাকায় সড়কে বসে স্লোগান দেন হিন্দু সম্প্রদায়ের তরুণ-যুবক, বৃদ্ধ, নারী সকলে। হাতে ছিল ‘আমার মাটি আমার মা, বাংলাদেশ ছাড়বো না’ লেখা প্লেকার্ড। মুখে প্রতিবাদী স্লোগান। ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে,সনাতনীরা জেগেছে।’ 

মিছিল শেষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু মহাজোটসহ বিভিন্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠনসহ বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষসহ  সকল শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন। 

এতে বক্তব্য রাখেন নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অনিল ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার দাসসহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বরিশাল: অনতিবিলম্বে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বরিশালে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

রোববার বিকেলে বরিশালের সদর রোডে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চাভুক্ত সংগঠনসমূহের আয়োজন এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

পূজা উদযাপন পরিষদের মহানগর সভাপতি ভানু লাল দে’র সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন একই পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা, জেলা সভাপতি মানিক মুখার্জি, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় সদস্য সুরঞ্জিত দত্ত লিটু, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট হিরণ কুমার দাস মিঠু ও  সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত দাস প্রমুখ।

কুষ্টিয়া: দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। 

রোববার বিকেল ৪টার দিকে কুষ্টিয়া জিওর মন্দিরের সামনে সনাতনধর্মাম্বলীরা বিক্ষোভ মিছিল শেষে মানববন্ধন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও কেন বারবার হিন্দুরা হামলা, আক্রমণের শিকার হবে, এমন প্রশ্নের জবাব চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি শেষে মানববন্ধন করেন কুষ্টিয়ার সনাতনী তরুণ, তরুণী, বৃদ্ধাসহ সব বয়সী মানুষ। 

তাদের দাবি- সংখ্যালঘু হিসেবে, বাংলাদেশে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের পূর্ণ মর্যাদা নিয়েই থাকতেন চান তারা।

এতে যোগ দেন জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত সনাতনী মানুষ। মানববন্ধনে সারাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণের নিন্দা জানান অংশগ্রহণকারী সনাতন ধর্মালম্বীরা।