সারা বাংলা

‘কিডাই আমার বুকের তে বেটারে কাইড়ে নিলো’

মো. রাব্বি। বয়স মাত্র ১০। ৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা ঘিরে দেশ তখন উত্তাল। ছেলে রাব্বিকে খুঁজতে বের হন বাবা জামাল উদ্দিন শেখ (৪১)। বিকেল ৫টার দিকে সাভারের মুক্তির মোড় এলাকায় আন্দোলন দমাতে গুলি চালায় পুলিশ। বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন জামাল। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

জামাল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ভাড়রা গ্রামের মৃত আজগর আলী শেখের ছেলে। সাভারে পাকিজা গার্মেন্টসে কাজ করতেন তিনি। ৫ আগস্ট রাতে জামাল উদ্দিন শেখের মারা যাওয়ার সংবাদ পেয়ে স্বজনেরা সাভার এসে তার মরদেহ নিয়ে যান। এরপর ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরদিন ৬ আগস্ট তারা তাকে দাফন করেন।

আজ বুধবার ভাঁড়রা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জামালের পরিবারে এখনও চলছে শোকের মাতম। তার বৃদ্ধ মা মোছা. রূপজান বিলাপ করে কাঁদছেন। ‘আমি অজু করে ঘরে যাচ্ছি। সোহনই (তখন) নাতি বেটার বউ কাঁদে উঠল। আমি আসে কচ্ছি- ওহ ঋতু কী হয়ছে, কাঁদিস ক্যা? ও কচ্ছে, দাদি আপনের ছোয়াল গুলি লাগে মরে গেছে।’

‘ওরে আল্লাহ, কিডাই আমার বুকের তে বেটারে কাইড়ে নিলো? ওহ আল্লাহ, বেটা তো পলালো, আমার খওয়ার খরচ কিডা দিবিনি?’ মা রূপজানের এই প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে। সবাই শোকে কাতর। 

স্বজনরা জানান, জামাল গ্রামে ইটভাটার শ্রমিক ছিলেন। সংসারের হাল ধরতে বছর দুয়েক আগে ঢাকায় আইসক্রিমের ব্যবসা শুরু করেন। সুবিধা করতে না পেরে তিনি মাসখানেক আগে পাকিজা গার্মেন্টসে চাকরি নেন।

জামালের তিন ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। স্ত্রী ফরিদা খাতুন, ছোট ছেলে রাব্বি ও বৃদ্ধ মায়ের খরচ জোগাতেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, জি.কে খালের ধারে প্রায় ৫ শতাংশ জমিতে তিন কক্ষের দোচালা টিনশেড ঘর। দুটি কক্ষে বিবাহিত দুই ছেলে এবং অন্য কক্ষে ছোট ছেলেকে নিয়ে থাকতেন জামাল। এ সময় বড় ছেলে সাকিব শেখ বলেন, ‘আব্বা দুই বছর আগে ঢাকা গিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করলেও সম্প্রতি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। ৫ আগস্ট বিকেলে ছোট ভাই রাব্বিকে খুঁজতে বাড়ির বাইরে গেলে আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের গুলিতে মারা যান। রাব্বিকে পরে খুঁজে পাওয়া গেলেও আব্বাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। আমি আব্বার হত্যাকারীদের বিচার চাই।’

স্ত্রী ফরিদা খাতুন এই শোক কীভাবে সামলে উঠবেন জানেন না। তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘যে যাবার সে তো চলে গেছে। আমি চাই, আমার স্বামীকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হোক। সরকার সহায়তা না করলে ছোট ছেলে ও বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে চলা সম্ভব হবে না।’

নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তিনি সকলের সহায়তা চান।  এ প্রসঙ্গে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম মিকাইল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘নিহত ও আহতদের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে নির্দেশনা এলে বাস্তবায়ন করা হবে।’