লক্ষ্মীপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী আফনান পাটওয়ারী ও সাব্বির আহমেদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দুটি ও পৃথক আরও দুই ঘটনায় দুটিসহ মোট চারটি মামলা হয়েছে সদর থানায়। এসব মামলায় অন্ততপক্ষে ২০০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে এসব ঘটনা ও গণঅভ্যুথানে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ত্যাগের পর থেকে স্থানীয় চার জন এমপি, জেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং মামলার আসামিরা আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানা যায়।
জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট রাতে আফনান হত্যার ঘটনায় তার মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫০০-৭০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। একইদিন রাতে সাব্বির হত্যা মামলায় তার বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে ৯১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। দুই মামলাতেই গডফাদার খ্যাত তাহেরপুত্র সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একে এম সালাহ্ উদ্দিন টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
এর আগে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৭০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এসব মামলায় আসামি করা হয় আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সাবেক পৌর মেয়র তাহেরের বড় ছেলে বিপ্লব, ছোট ছেলে শিবলু, পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার, আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, সৈয়দ আহমদ পাটোয়ারী, সৈয়দ সাইফুল হাসান পলাশ, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম রকি, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূইয়া, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইউছুফ পাটোয়ারী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল, রাকিব হোসেন লোটাস, আশরাফুল আলম, বায়েজীদ ভূইয়াসহ আরও বেশ কয়েকজনকে।
এদিকে ৪ আগস্ট আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা ও নির্বিচারে গুলি চালানোর পর বিক্ষুব্ধ জনতার গণপিটুনিতে নিহত হওয়া আরও সাত জনের পরিবারের পক্ষে এখনো কেউ মামলা করেনি। তবে সদর থানার পুলিশের এসআই এমদাদ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন বলে জানান ওসি।
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট শহরের মাদাম ব্রিজ ও ঝুমুর এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করে। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভিক্টোরিয়া কলেজের এইচ এস সি পরীক্ষার্থী (চলমান) আফনান পাটওয়ারী নামে এক শিক্ষার্থী মারা যান।
এরপর আন্দোলনকারীরা বাজারের তমিজ মার্কেট এলাকায় গেলে সাবেক পৌর মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের বাসার ছাদ থেকে চেয়ারম্যান টিপুর নেতৃত্বে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী দুই শতাধিক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে বলে জানান স্থানীয়রা। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাউছার আহমেদ বিজয়, ওসমান গণি ও সাব্বির আহমেদ নামে আরও তিন জন মারা যান।
এ সময় গুলিতে শতাধিক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা মেয়র তাহের ও টিপুর বাসভবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। টিপুসহ তার সঙ্গে থাকা সাত জনকে গণপিটুনি দেয়। এতে তাদের সাত জনেরই মৃত্যু হয়। টিপু এর আগেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। পরদিন টিপুর বাসভবন থেকে অজ্ঞাতনামা আরও একজনের অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।