বান্দরবানের থানচি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকার পাড়াগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। গত বছর বন্যার কারণে জুমের ক্ষতি হওয়ায় পর্যাপ্ত ফসল পাননি এসব পাড়ার বাসিন্দারা। যে কারণে সেখানকার চারটি পাড়ার ৬৪টি পরিবারের প্রায় ৩০০ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা বাঁশ ও কোড়ল খেয়ে দিন পাড় করছেন। পাড়াগুলোর বাসিন্দারা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে থানচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, গত রোববার আমরা দুটি নৌকায় সেখানে এক টন চাল পাঠিয়েছি। যারা খাবার নিয়ে গেছেন তারা ফিরলে বিস্তারিত জানা যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মেনহাক পাড়া, বুলু পাড়া, তাংখোয়াই পাড়া, য়ংডং পাড়ায় প্রায় ৬৪টি পরিবারের বাস। তারা জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। জুম চাষ থেকেই পরিবারগুলোর খাদ্যের যোগান হয়। গতবছর বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় সারা বছরের খাদ্য উৎপাদন করতে পারেননি। ফলে ওই দুর্গম এলাকায় খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। গত মে মাস থেকে পাড়াগুলোতে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। বর্তমানে স্থানীয় অনেকে জঙ্গল থেকে বাঁশ ও কোড়ল সংগ্রহের পর সিদ্ধ করে খেয়ে দিনযাপন করছেন।
বাসিন্দারা জানান, সীমান্তবর্তী এই পাড়াগুলোতে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নদীপথ। থানচি উপজেলা সদর থেকে রেমাক্রি ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। সিমান্তলাগোয়া এসব পাড়ায় নৌপথে যেতে সময় লাগে দুইদিন। তাদের খাদ্যের প্রধান উৎস জুম চাষ। জুমের ধানের ফলন ভালো হলে পরিবারের অভাব কিছুটা কমে। ফলন ভালো না হলে বছরজুড়ে দেখা দেয় খাদ্যের অভাব।
অন্যদিকে, সাঙ্গু নদীর পানি বাড়ার ফলে সদর বাজারে যেতে পারছেন না কেউ। কেননা বর্ষা মৌসুমে নদী পথে পণ্য আনা-নেওয়ায় খরচ হয় দ্বিগুণ। তাই তারা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি পাশে দাঁড়ানো আহ্বান জানিয়েছেন।
আদাপাড়ার বাসিন্দা ঙৈলিং ম্রো বলেন, ‘গতবছর বন্যার কারণে ফসল নষ্ট হয়েছে। এই বছরও বন্যার কারণে জুমের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে বাঁশ-কোড়ল খাচ্ছেন গ্রামবাসী। সরকার থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি।’
পাড়া প্রধান (কারবারি) বুলু ম্রো, মেনহাত ম্রো, এবং চিংক্রা ম্রো জানান, থানচির রেমাক্রী ইউনিয়নে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ১৩টি পাড়া রয়েছে। এর মধ্যে চারটি পাড়ার বাসিন্দারা খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদের ঘরে চাল নেই। জঙ্গল থেকে বাঁশ ও কোড়ল সংগ্রহ করে সিদ্ধ করে তিন বেলা খাচ্ছেন। বাকি ৯টি গ্রামের জুমের ধান প্রায় শেষের পথে। তাদের মধ্যে যাদের ঘরে ধান আছে তারা একজন আরেকজনকে ধান দিয়ে সাহায্য করছেন।
থানচির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো বলেন, ‘এসব পাড়ায় ম্রো এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাদের অবস্থা খুবই করুণ। বাঁশ ও কোড়ল খেয়ে জীবনযাপন করছেন। নদীতে পানির স্রোত বেশি। সদরে গিয়ে চাল কেনার মতো টাকাও নেই তাদের।’
রেমাক্রি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুই শৈথুই মারমা বলেন, ‘খাদ্য সংকটের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। সেসব এলাকাতে এক টন খাদ্যশস্য দেওয়া হবে। নির্বাহী অফিসার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।’
থানচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘রেমাক্রি ইউনিয়নটি অত্যন্ত দুর্গম। লিক্রি, তাংখোয়াই পাড়াসহ আরও কিছু পাড়া নেটওয়ার্কের বাইরে। একেবারে যোগাযোগ করা যায় না। সেখানকার কিছু পাড়ায় খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। গত রোববার দুটি নৌকায় করে এক টন চাল আমরা পাঠিয়েছি।’
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোহাজিদ উদ্দিন বলেন, ‘খাদ্য সংকটের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।’