কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় পদ্মা নদীতে কুমির আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কুমির রাতের আঁধারে নদী থেকে তীরবর্তী লোকালয়ে উঠে আসায় আতঙ্কে আছে পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা, কর্মজীবী জেলে ও কৃষকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ও ভেড়ামারা উপজেলা বন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম রাতে পদ্মার তীরে কুমির উঠে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের টিক্কা মুন্সির বাড়ির সামনে পদ্মা নদী সংলগ্ন এলাকায় সপ্তাহ ধরে রাতে একাধিক কুমির দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, কুমিরগুলো প্রায় ১০ ফুট মতো লম্বা।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির পর বেশ কয়েক দিন থেকে কুমিরের আনাগোনা বেড়েছে। এর আগে এলাকাবাসী কখনও কুমির দেখেনি। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে দলবেঁধে কয়েকটা কুমির নদীর কিনারা থেকে উপরে উঠে আসছে। মানুষ বা আলোর উপস্থিতি টের পেলে আবার নদীতে নেমে যাচ্ছে। এলাকাবাসী ধারণা করছে, কুমিরের ছোট ঝাঁক নদীতে এসেছে।
টিক্কা মুন্সি বলেন, কুমিরগুলো সাধারণত দিনের বেলায় নদীতে আর রাতের আঁধারে উপরে উঠে আসে। এ কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারছে না। যারা নদীতে গোসল করে তারাও গোসল করতে যেতে ভয় পাচ্ছে। আরও দুশ্চিন্তার বিষয় হলো কৃষকরা নদীতে পাট জাগ দিতে পারছে না। আর জাগ দেওয়া হলেও সেটা তুলতে পারছে না। এর আগে কখনও নদীতে কুমির দেখা যায়নি।
পদ্মা তীরবর্তী এলাকার মাছ ধরা জেলে আশরাফুল প্রামাণিক বলেন, কুমিরের ভয়ে মৎস্য কর্মকর্তা, জরুরিসেবা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন দিয়েও সুরাহা পাননি। ১০ দিন হলো নদীতে নামতে পারেননি। কীভাবে তার সংসার চলবে?
কৃষক ইসরাইল মুন্সি বলেন, ‘নদীতে পাট জাগ দিয়েছি। পাট বিনিয়ে শুকাতে দেবো। কুমিরের ভয়ে কেউ নামতে সাহস পাচ্ছে না।’
এদিকে, পদ্মা নদী সংলগ্ন সাহেবনগর গ্রামেও কুমির ও কুমিরের বাচ্চার দেখা মিলেছে। এ নিয়ে সেখানেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সাহেবনগর গ্রামের বাসিন্দা রাজিব হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা নির্বাহ করে নদীকেন্দ্রিক। নদীতে কুমির থাকায় প্রত্যাহিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।
বনবিভাগের ভেড়ামারা রেঞ্জের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভারত থেকে পানির সঙ্গে সঙ্গে কুমিরও এসে থাকতে পারে। শুধু ভেড়ামারা নয় দৌলতপুর, মিরপুরের পদ্মা নদীর তীরেও কুমিরের দেখা মিলেছে। নদী তীরবর্তী এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আশা করেন, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে কুমিরও চলে যাবে। অতিরিক্ত স্রোত থেকে রেহাই পেতে বিশ্রাম নিতে তারা নদী তীরে উঠে আসছে বলে মনে করেন তিনি।