সারা বাংলা

চাঁদপুরে বন্যায় ভেসে গেছে ১৬ কোটি টাকার মাছ

অবিরাম বর্ষণ ও পার্শ্ববর্তী জেলা কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের বন্যার পানি চাঁদপুর হয়ে নামায় জেলার পুকুর, জলাশয় ও ঘের তলিয়ে মৎস্যচাষিদের ১৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এছাড়াও জেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। 

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে জেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন পুকুর, দিঘি ও ঘের প্লাবিত হয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার চাষ করা বিভিন্ন ধরনের মাছ ও মাছের পোনা ভেসে গেছে। 

তবে ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো প্রকার প্রণোদনার আওতায় আনা হবে কিনা সে বিষয়ে তিনি এখনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

জেলা মৎস্য কার্যালয় জানিয়েছে, প্রায় ১০ দিনের ভারী বৃষ্টিতে চাঁদপুর জেলার ৬২টি ইউনিয়নের ১০ হাজার ৮০১টি পুকুর-দিঘি ও ৫৫টি ঘের থেকে আনুমানিক ১৬ কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার বিভিন্ন প্রকারের চাষ করা মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে। সেখানে ৬ হাজার ৫০০ পুকুর-দিঘি ও ৫০টি ঘেরেরই ১৪ কোটি ১৭ হাজার টাকার মাছ পানিতে ভেসে যায়। 

এদিকে হাজীগঞ্জের ৩৭৪টি পুকুর-দিঘি, ফরিদগঞ্জে ১ হাজার ২৫০টি পুকুর-দিঘি, চাঁদপুর সদরের ৪৫০টি পুকুর-দিঘি, মতলব দক্ষিণের ১২০টি পুকুর-দিঘি, কচুয়ার ৭২টি পুকুর-দিঘি, হাইমচরের ৩২টি পুকুর-দিঘি ও মতলব উত্তরের তিনটি পুকুর-দিঘির মাছ ভেসে গেছে। এখনো এসব এলাকা জলাবদ্ধ থাকায় চরম বিপাকে রয়েছেন মৎস্য খামারি ও চাষিরা। 

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য আমরা আমাদের দুটি পাম্প চালু রেখেছি। তবে পানি আস্তে আস্তে নামছে। কারণ, নদীতে পানি ও স্রোত বেশি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মানুষ ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট করে নানাভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নষ্ট করে রেখেছেন। এ জন্য পানি নামতেও সময় নিচ্ছে। 

ফরিদগঞ্জ উপজেলার মাছচাষি নজিম উদ্দিন বলেন, আমরা ১৫ থেকে ২০ জন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ঘেরে অন্তত ৪০ কোটি টাকার মাছ চাষ করেছি। কিন্তু টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে আমাদের কোটি কোটি টাকার মাছ বের হয়ে গেছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমাদের কোনো সহযোগিতা করা তো দূরের কথা, কোনো খবরও নেননি। 

ফরিদগঞ্জ উপজেলার কেরোয়া গ্রামের মাছচাষি মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা কয়েকজন যৌথ পুঁজি বিনিয়োগ করে শতাধিক চর পুকুর ও মরা ডাকাতিয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করেছিলাম। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে অনেক মাছ ভেসে গেছে। এতে আমাদের অন্তত পাঁচ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, উপজেলার মৎস্য প্রকল্পগুলোর ২ হাজার ৬৯৫ হেক্টরের মধ্যে ৬৭৫ হেক্টর এলাকায় ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মাছচাষি আছেন। এর মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার মাছ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

চাঁদপুরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্লাহ বলেন, এখন পর্যন্ত জেলার ৬৪টি ইউনিয়নের ১ লাখ ১৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাই নিয়েছেন অন্তত ৬ হাজার ৭২৬ জন মানুষ। 

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, এ জেলায় উজানের ও বৃষ্টির পানির কারণে যে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে তা মোকাবেলায় সব ধরনের কার্যক্রম প্রশাসন হতে নেওয়া হচ্ছে। তবে আর বৃষ্টি না হলে দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।