চাঁদপুর লঞ্চঘাটে নৌকা নিয়ে এসে ইলিশ বিক্রি করছেন জেলেরা। মূলত, লঞ্চ যাত্রীদের টার্গেট করেই জেলেরা নজরকাড়া ইলিশ নিয়ে ঘাটে আসছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌপথে চাঁদপুর লঞ্চঘাট হয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীরা শখের বসে এসব ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুরে এসে ইলিশ কিনে অনেকেই রোমাঞ্চ অনুভব করেন। সে সুযোগটি নিয়ে জেলেরাও চলতি সময়ের বাছাই করা ইলিশ নিয়ে আসেন এবং ঘাটের চারপাশে নৌকা নিয়ে ভেসে ভেসে বেশ হাঁকডাক ছেড়েই বিক্রি করেন। চাঁদপুর লঞ্চঘাটের এই দৃশ্য এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। এ ঘাটের যাত্রীরা এ দৃশ্যের সাথে পরিচিত। তাই এখান দিয়ে যাতায়াতকালে অনেকেই ইলিশ কেনার ইচ্ছে মনে পোষণ করেন।
শনিবার (৩১ আগস্ট) সকালে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে দেখা গেলো ভাসমান নৌকায় জেলেদের ইলিশ বেচাবিক্রির সে দৃশ্য। সঙ্গে ক্রেতাদের হাঁকডাকে পুরো এলাকাই যেন সরগরম। এখানে বাজারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চাঁদপুরের বড়স্টেশন মাছঘাটসহ আড়তগুলোতে যেখানে ৯শ’ গ্রামের একটি ইলিশের দাম ১৫শ’ টাকা বা তার চেয়েও বেশি। সেখানে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে নৌকায় করে ভাসমান ইলিশ বিক্রেতাদের থেকে ৯শ’ গ্রাম বা ১ কেজি ওজনের চারটি ইলিশ ওই একই দামে বা তার চেয়ে সামান্য বেশি দিলেই কেনা যাচ্ছে। এমনকি ৩শ’ গ্রামের ৭/৮টি ইলিশের দাম ১ হাজার হতে ১৫শ’ টাকা মাত্র।
স্থানীয়রা জানান, নৌকায় বসে ইলিশ বিক্রি করা চাঁদপুর লঞ্চঘাটের অধিকাংশ জেলেই শহরের বেদে পল্লীর। এরা ৪/৫ জনে নৌকা কিনে এই ইলিশ ব্যবসা চালাচ্ছে বছরের পর বছর। কোনো কোনো জেলে বাপ দাদার ব্যবসা হিসেবে এই পেশায় পড়ে রয়েছেন।
সৈকত, আরিফ হোসেন, লিটন, মহসীনসহ আরও কয়েকজন নৌকায় ইলিশ বিক্রেতা জানালেন, তারা চেষ্টা করেন ভালো ইলিশটা বিক্রি করতে। এখন ইলিশের দাম আড়তে বেশি হওয়ায় কখনো কখনো নদী থেকে সরাসরি জেলেদের থেকে তারা ইলিশ কিনে এনে বিক্রি করেন। তারা চেষ্টা করেন সীমিত লাভ করে ইলিশের স্বাদ যাতে সবাই নিতে পারে। পচা ও চাঁদপুরের বাইরের ইলিশ বিক্রি করেন না বলেও জানান তারা।
লঞ্চযোগে ঢাকায় যাবেন মো. আমির। তিনি বলেন, আমি ৯শ’ থেকে ১ কেজি ওজনের ৮টি ইলিশ কিনলাম মাত্র ৩ হাজার টাকায়। দামে কম, তাও আবার চাঁদপুরের ইলিশ- এটা ভেবেই মনে আমার খুবই আনন্দ লাগছে।
মো. তাজবির হোসেন নামের আরেক ঢাকাগামী যাত্রী বলেন, আমি দেড় কেজি বা তার চাইতে বেশি ওজনের ৪টি ইলিশ কিনলাম ২৮০০ টাকায়। কমদামে চাঁদপুরের ইলিশ পেয়ে মনে শান্তি লাগছে। আমি এই প্রথম চাঁদপুরের ইলিশ কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। এতে মানসিক একটা তৃপ্তি কাজ করছে।
অন্যান্য ক্রেতারা বলেন, প্যাকেটিং নিয়ে সমস্যা এবং কিছুটা নরম জেনেও চাঁদপুরের ইলিশের লোভ সামলাতে না পেরেই লঞ্চঘাট হতে নৌকায় বসে বিক্রি করা জেলেদের থেকে এসব ইলিশ কিনছি। এতে সময় বাঁচে এবং দামেও কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন- অভিযোগও রয়েছে অনেকে ইলিশ নিয়ে যাওয়ার পর কাটতে গিয়ে দেখেন সব পচা ও নষ্ট। তাই চাঁদপুরের রূপালী ইলিশের সুনাম নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানান তিনি।