সারা বাংলা

কুড়িগ্রামের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন, সরবরাহ অর্ধেক বলছে কর্তৃপক্ষ

কুড়িগ্রামে গত কয়েকদিন ধরে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবনে। এ নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়ছেন গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোডশেডিং চলছে জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনেও। পল্লীবিদ্যুতের আওতাধীন এলাকাগুলোতে দিনে রাতে এক ঘণ্টা পরপর চলছে লোডশেডিং। আবার কোথাও কোথাও লোডশেডিংয়ের মাত্রা তার চেয়েও বেশি। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকরাও।

জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনাবৃষ্টির কারণে আমন খেতে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সেচ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সেচ প্রকল্পের বেশিরভাগ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত হওয়ায় আমন চাষে লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক ডিজেল চালিত শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন।

এছাড়া, সামর্থবানরা ঝুঁকছেন আইপিএসের দিকে। তবে রুটিন মেনে চলা লোডশেডিংয়ে আইপিএসের ব্যাটারি চার্জ করা নিয়েও সংশয়ে পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বালাকান্দি এলাকার পল্লীবিদ্যুৎ গ্রাহক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়িতে ছোট বাচ্চা ও বৃদ্ধ মানুষ আছে। রাতে হিসাব করে এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। গরমে কেউ ঘরে থাকতে পারছি না।’

কুড়িগ্রাম জেলা শহরের ব্যবসায়ী শফিকুল ইনলাম বলেন, এক ঘণ্টা পরপর কারেন্ট যায়। মাঝে মধ্যে দেড়- দুই ঘণ্টাও কারন্টে থাকে না। বিদ্যুৎ না থাকায় দোকানে কাজ করা যায় না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা করা যাবে না।’

চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ার কারণ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন ঘাটতির কথা বলছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা জানায়, সরকারি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালসহ ৫ ধরণের পাওয়ার প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। সব প্লান্টের জ্বালানি সরবরাহ করে পিডিবি। বর্তমানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানায়, কুড়িগ্রামের টগরাইহাট গ্রিডে জেলার ৫টি উপজেলার (সদর, উলিপুর,চিলমারী, রাজারহাট ও ভূরুঙ্গামারী) জন্য মোট চাহিদা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট। বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৮ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট। কুড়িগ্রাম শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ৩৩ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। তাদের আওতায় বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ১৩ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৭ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এছাড়া, ন্যাশনাল লোড ডিসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে স্ক্যাডা অপারেশনের মাধ্যমে সরবরাহ বন্ধ করলে লোডশেডিংয়ের সময় আরও প্রলম্বিত হচ্ছে।’

নেসকো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিফুর রহমান বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেক। কখনো অর্ধেকেরও কম। ফলে লোডশেডিং চলছে। সহসাই পরিস্থিতির উন্নতি হবে কিনা তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।’

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মহিতুল ইসলাম বলেন, ‘কুড়িগ্রামে আমাদের প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক। আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাচ্ছি। ফলে আমাদের আওতাধীন সঞ্চালন লাইনে ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ লোডশেডিং চলছে।’ কবে পরিস্থতি উন্নত হবে সে বিষয়ে উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন বলেও জানান তিনি।