বন্যা পরবর্তীতে নোয়াখালীতে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। জেলার বন্যার শিকার আটটি উপজেলায় এখন পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া দেখা দেয়ায় বন্যার্তরা রয়েছে আতঙ্কে। তারা পর্যাপ্ত সেবা ও ওষুধ সংকটেও রয়েছেন।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই হাসপাতালে প্রায় ৭শ’র উপরে ডায়রিয়া রোগী সেবা নিয়েছেন। সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক রোগী। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। রয়েছে ওষুধ ও সেবক-সেবিকা-চিকিৎসক সংকট।
সরেজমিনে হাসপাতালটির ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ওয়ার্ডের কক্ষ, মেঝে ও করিডরে রোগীদের ভিড়। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশই শিশু। জায়গা না হওয়ায় অস্থায়ী ওয়ার্ডও খোলা হয়েছে পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনে। সেখানে কোনো শয্যা নেই। মেঝেতে চলছে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা। কোনো কোনো শয্যায় একসঙ্গে দুইজন রোগীকেও থাকতে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে অবস্থান করার সময় দেখা যায় নতুন নতুন রোগী আসছে। বেশীরভাগই শিশু। বয়স্করাও রয়েছেন।
চাটখিল উপজেলার বাসিন্দা আকতার হোসেন বলেন, ছেলের প্রথমে পাতলা পায়খানা দেখা দেয়। স্থানীয়ভাবে পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় এখানে ভর্তি করেছি। গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার শুল্লুকিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমার মেয়ের বয়স আট মাস। ডায়রিয়ার কারণে মেয়েটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। হাসপাতালে ভর্তির পর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখানে যে পরিবেশ তাতে এখানে থাকাটা অসম্ভব। কিন্তু মেয়ে সুস্থ না হওয়া হাসপাতাল ছাড়তে পারছি না।
বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী গ্রামের মো. আফজাল হোসেন বলেন, দশ মাস বয়সী মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। গত ৩ দিন ধরে হাসপাতালে। মেয়েটার শরীরে শক্তি নেই। ঘাড়ও নাড়াতে পারছিল না। কোলে নিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে বসে তার মা, আর আমি দাঁড়িয়ে আছি স্যালাইন হাতে। হাসপাতাল থেকে ঠিক মতো ওষুধ ও সেবা পাচ্ছি না।
সোনাইমুড়ি থেকে আসা মো. সোহেল জানান, তিনি তার শিশু ছেলেকে এখানে ভর্তি করিয়েছেন। অসুস্থ ও নোংরা পরিবেশে তিনি ও তার স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। ঠিক মতো নার্সরা আসে না। ডাক্তারও আসে না। ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, বন্যার যত উন্নতি হচ্ছে, ডায়রিয়া রোগী তত বাড়ছে। বেশীর ভাগই শিশু। হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সের সংকট রয়েছে। এরপরও সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এ সময় রোগীর স্বজনদের অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমতো সেবা অব্যাহত রেখেছি। স্যালাইন ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সংকট মোকাবেলায় আরও ওষুধ আসছে।