নোয়াখালীতে এবার স্মরণকালের ভয়াবহতম বন্যা হয়েছে। পুরো জেলা বন্যার কবলে পড়ে। বাদ যায়নি হাট-বাজারও। নোয়াখালী পৌর বাজারের প্রতিটি অলি গলি এখনো পানির নীচে।
নোয়াখালী জেলা শহরের বাসিন্দাদের জন্য প্রধান বাজার হচ্ছে নোয়াখালী পৌর বাজার। এটি শহরের মানুষের দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় কেনার জন্য একমাত্র বাজার। বন্যায় এ বাজারটিও সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা ভয়াবহ আকার নিলে পুরো বাজার পানিতে তলিয়ে যায়। কোথাও বিভিন্ন পণ্য নিয়ে দোকান বসানো সম্ভব হয়নি ব্যবসায়ীদের। তারা বন্যার শুরু থেকে বাজারের পাশে শহরের প্রধান সড়ক দখল করে বাজার বসিয়েছে। এতে শহরবাসী যেমন চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে, তেমনি প্রতিদিন হচ্ছে তীব্র যানজট। অন্যদিকে, ক্রেতাদের অভিযোগ বন্যার দোহাই দিয়ে বেশী দাম রাখছেন বিক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নোয়াখালী পৌর বাজারের কোথাও হাঁটু সমান পানি, কোথাও তার চেয়ে একটু কম। কিন্তু পুরো বাজার এখনো পানিতে সয়লাব। ব্যবসায়ীরা নিত্যদিনের পসরা নিয়ে বসতে পারছেন না।
মুদিপণ্যের গলিতে দেখা যায়, অনেক দোকানের মেঝেতে এখানো পানি রয়েছে। মুরগি, গরু, খাসি, মাছের গলিতে দেখা যায়, বন্যার পানির সাথে ময়লা-আর্বজনার পানি মিশে একাকার।
সুবেল নামে একজন সবজি ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে আমি যে জায়গায় বসতাম, সেখানে হাঁটুর উপরে পানি ছিলো। প্রথমে মালামাল সব নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। পরে রাস্তার পাশে এসে বসেছি।
ফজলু নামের একজন মাছ ব্যবসায়ী বলেন, বাজারের সবচেয়ে উঁচু ভিটা হচ্ছে মাছের গলির। কিন্তু এখানেও পানি ছিলো হাঁটু সমান। ক্রেতারা এই ময়লা পানিতে আসতে চান না। তাই বাধ্য হয়ে প্রধান সড়কের পাশে বসেছি।
বাহার নামে একজন মুরগি ব্যবসায়ী জানান, আমরা যারা মুরগির ব্যবসা করি, তারা কোথাও যেতে পারিনি। কারণ, আমাদের রয়েছে অধিক সংখ্যক মুরগি, সাথে মুরগির খাঁচা। এখনতো ক্রেতারা মুরগি বাজার থেকে কিনে জবাই করে কেটেকুটে নেয়। আমরা এসব সামগ্রী নিয়ে রাস্তায় যেতে পারিনি। ফলে পুরো বন্যার পানির সাথে যুদ্ধ করে আমরা মুরগি ব্যবসায়ীরা এখানে রয়েছি। ময়লা পানিতে চলাচলের কারণে অনেকের পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে।
কবির হোসেন নামে একজন গরুর মাংস বিক্রেতা বলেন, এই গলিতে এখনো হাঁটু সমান পানি। আমাদের গরু জবাই করতে সমস্যা হচ্ছে। ময়লা বিষাক্ত পানি মাড়িয়ে ক্রেতারা ভিতরে আসছেনা। ফলে গরুর মাংসের বাজারে ধস নেমেছে।
সোহাগ নামে একজন মুদি দোকানি বলেন, বাজারের প্রতিটি মুদি দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। যে রাতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির কারণে পানি দোকানে ঢুকেছে, সে রাতে প্রায় দোকানির অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো আমরা দোকান খুলি দেরীতে। কারণ, ক্রেতারা সহজে গলির ভিতরে আসেন না। শহরের বিভিন্ন এলাকার অলি গলিতে এখন দোকানের অভাব নেই। সেখান থেকে ক্রেতারা মুদিপণ্য কিনছেন।
আসিফ নামে একজন ক্রেতা বলেন, বাজারের যে অবস্থা তাতে ভিতরে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই। ময়লা-আবর্জনার পানি মিলেমিশে একাকার।
রাকিব হোসেন নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, বাজার করাটা এখন একটা বড় সমস্যা। প্রতিটির গলির ভিতরে পানি। তাছাড়া জিনিসপত্রের দাম বেশি। সবজি-মাছ-মুদি পণ্য সবকিছুরই দাম উর্ধ্বগতি। অনেকটা নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
হেলাল নামে আরেকজন বলেন, আমরা নিম্নবিত্ত। দিন আনি দিন খাই। বন্যার কারণে কাজকর্ম প্রায় বন্ধ। কোথাও কাজ নেই। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ঘরে এসেছি গতকাল। রান্নার চুলা পর্যন্ত পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো রকমে রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে এসে দেখি দামে আগুন। শুধু সবজি দিয়ে যে খাবো সে ব্যবস্থাও নেই এই মুহূর্তে। মাছের কথা বাদই দিলাম, সবজির দামও বাড়তি।