ঢাকার সাভারের শিল্পাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে অস্থিরতার মধ্যে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সেনা সদস্য, শিল্প পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা টহল দিচ্ছে। এতে আজ কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ রয়েছে।
শিল্প পুলিশ জানায়, বেশিরভাগ কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। কিছু কারখানা বন্ধ রয়েছে।
কয়েক দিন টানা শ্রমিক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ দেখা গেলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে কোথাও শ্রমিক বা বহিরাগত কারো তৎপরতা দেখা যায়নি। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে সেনা সদস্য, শিল্পপুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়।
কারখানার সামনে শ্রমিকদের অবস্থান সকালের দিকে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সাভারের আশুলিয়ার শিমুলতলায় বন্ধ থাকা দি ড্রেস এন্ড দি আইডিয়াস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কারখানার মূল ফটক ও কারখানা উল্টোপাশে একটি বিপণিবিতানের সামনে অবস্থান নেয়।
দি ড্রেস এন্ড দি আইডিয়াস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা জানান, গত শনিবার (৩১ আগস্ট) চার জন মহিলা সুপারভাইজার ও একজন লাইনম্যানকে চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ। এর পর দিন রোববার থেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শ্রমিকরা জানতে পারেন, ট্রাকে করে কারখানা থেকে যন্ত্রপাতিসহ মালামাল সরিয়ে ফেলছে কর্তৃপক্ষ। এরপরই ভোরের দিকে তারা কারখানার সামনে অবস্থান নেন।
সকাল ৮টার দিকে সড়কে টহলরত সেনা সদস্যরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিষয়টি নিয়ে কারখানা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান। এ সময় সেনা সদস্যরা শ্রমিকদের সড়ক অবরোধসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।
সকাল ১০টার দিকে কারখানার সামনে গিয়ে মূল ফটকের সামনে বেশ কয়েকজন শ্রমিককে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। কারখানার অপর পাশের বিপণিবিতানের সামনে অর্ধশতাধিক শ্রমিক অবস্থান নিয়ে আছেন। কারখানার ফটকে বন্ধের নোটিশ টাঙানো রয়েছে।
এক শ্রমিক বলেন, ‘সুপারভাইজার ও লাইনম্যানকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে রোববার থেকে মালিক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর রাতে শুনি, ট্রাকে করে মালিকের লোকজন যন্ত্রপাতিসহ মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের দাবি কারখানা চালু হোক। আমাদের বেতনের সময় হয়েছে। বন্ধ থাকলে বেতন কবে পাব জানি না।’
কিছু কারখানা বন্ধ আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকার নাবা নীট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানাটি বন্ধ দেখা যায়।
এ ছাড়া পলাশবাড়ী এলাকার গিল্ডান বাংলাদেশ নামে পোশাক কারখানা বন্ধ অবস্থায় দেখা যায়। সকালে নাসা গ্রুপের কারখানায় শ্রমিকরা উপস্থিত হলে কাজ না করায় কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
গিল্ডান বাংলাদেশ কারখানার নিরাপত্তারক্ষী মো. মিন্টু বলেন, ‘আমাদের সব কারখানা অনর্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। কয়েক দিন শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে। আজকে (মঙ্গলবার) কেউ আসেনি।’
এদিকে, সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরন অঞ্চলের (ডিইপিজেড) মূল ফটকে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে চাকরিপ্রার্থীদের দিনভর বিক্ষোভ থাকলেও আজ ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ডিইপিজেডের ভেতরের কারখানাগুলোতে নির্বিঘ্নে কার্যক্রম চলছে।
দায়িত্বশীলরা যা বলছেন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) আনোয়ার পারভেজ বলেন, ডিইপিজেডের পুরাতন এবং সম্প্রসারিত জোনে মোট ৮৬টি শিল্পকারখানা রয়েছে। সবগুলো কারখানায় শান্তিপূর্ণভাবে কাজ চলছে।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সাভার ও আশুলিয়ায় আজকের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। শ্রমিকরা নির্দিষ্ট সময়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করায় ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ থাকা এবং ছুটি দেওয়া কারখানার সংখ্যা নির্ণয়ে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তবে সংখ্যাটি খুব বেশি নয়।
তিনি বলেন, দি ড্রেস এন্ড দি আইডিয়াস পোশাক কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে বিকেলে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে।
কয়েক দিন ধরে মজুরি, হাজিরা বোনাস, শ্রমিক ছাটাই বন্ধ, নিয়োগসহ নানা দাবিতে সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। এ পরিস্থিতির জেরে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) শিল্পকারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অস্থিরতায় ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে সেনা, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু করার নির্দেশনা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার বিকেলে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে শিল্পের নিরাপত্তায় শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা।
ওই বৈঠক থেকে যৌথ অভিযানের নির্দেশনা আসে। এরপর থেকে সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।