সারা বাংলা

জুনে হৃদরোগে মৃত্যু, আগস্টে হত্যা দেখিয়ে মামলা

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় করা দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর অর্থাৎ আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে থানায় মামলা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট মামলাটি করেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন।

মামলার এজাহারে বাদী নুরুল আমিন উল্লেখ করেন, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন বাবুল মিয়া। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়ি ফেরার সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বাবুল মিয়াকে কালীবাড়ি বাজার থেকে তুলে নিয়ে দুপ্তারা ঈদগাহ মাঠে হত্যা করা হয়।

মৃত্যু সনদ থেকে জানা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৩ জুন বাবুল মিয়া মারা গেছেন। তার বাবার নাম আলী হোসেন। বাবুল মিয়ার মৃত্যুতে বিএনপি মহাসচিব তখন শোকবার্তাও পাঠিয়েছিলেন বলে স্থানীয় বিএনপির কেয়েকজন নেতাকর্মী জানিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর ছোট ভাই নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা বাবুল মিয়াকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তারা তাকে কুপিয়ে ও রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন বাবুল মিয়া। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।

তিন জুন উপজেলার গিরদা-পশ্চিমপাড়া-চৌধুরীপাড়া কবরস্থানে বিএনপি নেতা বাবুল মিয়ার মরদেহ দাফন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক সেলিম মিয়া। এছাড়া, ৩ জুন ৪৯ বছর বয়সী বাবুল মিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে মৃত্যু সনদ দিয়েছে রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় অবস্থিত ডিকেএমসি হাসপাতাল লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, বাবুল মিয়ার পরিবার এই সাজানো মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তাদের কাউকেই এই মামলার সাক্ষী করা হয়নি।

এদিকে, বাবুল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী ও পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। মামলা নিয়ে জটিলতার কারণে এবং বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়ায় তারা অন্যত্র চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী ও দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘বাবুল মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এটা সত্য। এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন, সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে। তাকে কুপিয়ে জখম করলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকতে পারে।’

৩ জুন হার্ট অ্যাটাকে বাবুলের মৃত্যু হলেও দুই মাস পর ৪ আগস্ট তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলায় কেন উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রশ্ন করলে নুরুল আমিন বলেন, ‘মামলায় মৃত্যুর তারিখের বিষয়ে ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে সেটা খোঁজখবর নিয়ে সংশোধন করা হবে।’

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ বলেন, ‘কেউ অভিযোগ নিয়ে আসলে আমাকে নিতে হবে। সেজন্য নিয়েছি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাজ করছেন। এর পেছনে কেউ থাকলে, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’ 

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আমীর খসরু বলেন, ‘ওই সময় দেশে চরম একটা অবস্থা বিরাজ করছিল। এর মধ্যেও যারাই থানায় কোনো অভিযোগ নিয়ে গেছেন পুলিশ তা গ্রহণ করেছে। এই মামলা যদি ভুয়া বা কাউকে হয়রানি করার প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

উল্লেখ্য, বাবুল মিয়া হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুসহ ১৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নাম না জানা আসামি করা হয়েছে আরও ১৫০ জনকে।