সারা বাংলা

অবৈধ পথে ইতালি, ২ ভাইসহ নিখোঁজ ৬ 

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূয়ালী গ্রামের সিরাজ মুন্সির দুই ছেলে আল-আমিন মুন্সি ও মিলন মুন্সি পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে অবৈধ পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইতালির উদ্দেশ্যে। সাত মাস আগে ধার দেনা করে দালালের কাছে পরিবারটি ৩০ লাখ টাকা দিয়েছিল। অথচ গত ৪ মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আলা-আমিন ও মিলন মুন্সির।

গতকাল মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে খবর আসে দুই ভাই ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে মারা গেছেন।

শুধু আল-আমিন ও মিলনই নয়, একই গ্রামের শাহিন মাতুব্বর, শান্ত খান, মনির হোসেন ও জাফর মিয়ার সঙ্গে তাদের পরিবারের কেউ যোগাযোগ করতে পারছে না। তারাও পাড়ি জমিয়েছিলেন ইতালিতে। 

স্বজনদের ধারণা, হয়তো তারাও আর বেঁচে নেই। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে এবং ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সাত মাস আগে অবৈধপথে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া যান মিলন ও আল-আমিন। সেসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন একই গ্রামের শাহিন মাতুব্বর, শান্ত খান, মনির হোসেন ও জাফর মিয়া। চার মাস আগে মিলন ও আল আমিনসহ বাকিদের পরিবারের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়। কয়েক মাস আগে মিলন ও আল-আমিন লিবিয়ায় দালালদের অবরুদ্ধ ঘর থেকে বের হয়ে একটি নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পারি দিয়ে ইতালি রওনা দেন। মঙ্গলবার রাতে তাদের পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, নৌকার তলা ফেটে সাগরে ডুবে মিলন ও আল-আমিন মারা গেছে। সেই নৌকায় থাকা শাহিন মাতুব্বর, শান্ত খান, মনির হোসেন ও জাফর মিয়া নিখোঁজ হয়েছেন।

আল-আমিন ও মিলনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

নিখোঁজ মিলন ও আল আমিনের বাবা সিরাজ মুন্সি বলেন, ‘গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর দুই ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য আমাদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেন। সাত মাস ধরে তিনি দুই ছেলেকে কোথায় পাঠিয়েছে তার কোনো তথ্য সঠিকভাবে দিতে পারেননি। তার কাছে বারবার আমার দুই ছেলের খোঁজ জানতে চাইলেও তিনি সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। ফরহাদ মাতুব্বর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের তালবাহানা করে আসছেন। দুই ছেলেকে মৃত অথবা জীবিত ফেরত চাই। আমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই।’

মিলন ও আল-আমিনের মা মায়া বেগম বলেন, ‘মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর। তিনি ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেন। ধার দেনা করে ৩০ লাখ টাকা দালালের হাতে দেই। এখন ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে চিন্তায় আছি।’

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর

নিখোঁজ দুই জনের খালাতো ভাই মানিক বলেন, ‘মিলন ও আল আমিন লিবিয়ার একটি ঘরে অবরুদ্ধ ছিলেন। সেখন থেকে তারা অন্যদের সঙ্গে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগরে পাড়ি দিচ্ছিলেন। তিনটি নৌকায় তারা যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একটি নৌকার তলা ফেটে যায়। নৌকাটিতে থাকা সব লোক নিখোঁজ হন। ওই নৌকায় আমার দুই খালাতো ভাইও ছিল।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের মৃত্যুর খবরটি মাদারীপুরের আরেক এক যুবক দেশে এসে আমাদের জানিয়েছেন। তিনি অন্য নৌকায় ছিলেন। সেই নৌকার যাত্রীরা সবাই ধরা খেয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। সে দেশে ফিরে আমাদের জানিয়েছেন মিলন এবং আল আমিন আর নেই।’ 

নিখোঁজ মিলন মুন্সির স্ত্রী ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ও দেবর এক সঙ্গেই ছিলো। গতকাল রাতে একজন খবর দিয়েছে তারা মারা গেছে। শুধু তারা দুই জনই নয় এই এলাকার আরও চার জন ছিলো। তারাও নাকি নিখোঁজ।’

নিখোঁজ শান্ত

নিখোঁজ শান্ত খানের মা বলেন, ‘আমার ছেলেকে ফরহাদ চেয়ারম্যান লোভ দেখিয়ে নিয়েছে। গত চার মাস ছেলের সঙ্গে যোগযোগ নেই। মঙ্গলবার শুনি, আমার ছেলেসহ ৬ জন মারা গেছে। আমি বিচার চাই।’

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত  ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর পলাতক রয়েছেন। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিষটি জেনেছি। ভুক্তভোগীর বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। মিলন ও আল-আমিনের নিহতের খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধামেও ভাইরাল হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডাসার উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘ডাসারে কয়েকজন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’