ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সালিশ বৈঠক চলাকালে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রামবাসী। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের চান্দাইসার গ্রামের সংঘর্ষ হয়। আহতদের মধ্যে গুরুতর ৯ জনকে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
গুরুতর আহতরা হলেন- হাসান মিয়া (২৫). রাইহান (২০), মো. সুজন (২৬ ), হামদু মিয়া (৭০), আনোয়ার হোসেন (৫৪), ইয়ামিন (৩৬), ফারুক হোসেন (৩৬), সুচী আক্তার (১৯) ও তানজিন মিয়া (২০)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চান্দাইসার গ্রামের সফিক মিয়ার ছেলে সবুজ মিয়ার (২০) সঙ্গে বিনাউটি ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের মিন্টু মিয়ার ছেলে শরীফ মিয়ার (১৯) সম্প্রতি নারী সংক্রান্ত ঘটনায় মারামারি হয়। এই বিরোধ মেটাতে এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতৃস্থানীয়রা দুই গ্রামবাসীর উদ্যোগে চান্দাইসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গতকাল সন্ধ্যায় সালিশ বৈঠকে বসেন। সাবেক ইউপি সদস্য মো. মতিন মিয়ার সভাপতিত্বে এবং বিল্লাল হোসেনের সঞ্চালনায় বৈঠকে ইউপি সদস্য রাশেদুল ইসলাম রাসেল উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক চলাকালীন মজলিশপুর গ্রামের মো. হোসাইন বক্তব্য দেওয়ার সময় ক্ষিদিরপুর গ্রামের এমরান সরকার বাধা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে দুই গ্রামের লোকজনদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে কসবা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ চলাকালে অন্তত ৫০ জন আহত হন।
এ ঘটনায় মজলিশপুর গ্রামের ফারুক হোসেন বাদী হয়ে চান্দাইসার গ্রামের ৯ জনের বিরুদ্ধে এবং চান্দাইসার গ্রামের সুজন মিয়া বাদী হয়ে ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ দায়ের করেন থানায়।
চান্দাইসার গ্রামের সবুজ মিয়ার বড় ভাই সুজন মিয়া বলেন, ‘মজলিশপুর গ্রামের শরীফ মিয়া ও তার সঙ্গে আরও ১০-১৫ জন লোক নিয়ে আমার ভাই সবুজ মিয়াকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করেছে।’
মজলিশপুর গ্রামের হামদু মিয়া বলেন, ‘চান্দাইসার গ্রামের লোকজন বৈঠক চলাকালীন আমাদের গ্রামের লোকজনের ওপর সব দোষ চাপিয়ে দেয়। এ সময় তাদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হলে তারা দাও ও লাঠি নিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়। পরে দুপক্ষে মধ্যে সংঘর্ষ হয়।’
বিনাউটি ইউনিয়নের পরিষদের সদস্য রাশেদুল ইসলাম রাসেল বলেন, ‘নারীসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সুবজ ও শরীফ মিয়ার সঙ্গে মারামারি হয়। ওই বিরোধ মেটাতে সালিশ বৈঠক চলকালীন দুই পক্ষের সমর্থদের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়। পরে দুই পক্ষই তাদের গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।’
কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘৯ জনকে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।’
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজু আহমেদ বলেন, ‘দুই গ্রামবাসীর লোকজনদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই গ্রামবাসী দুটি অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগ দুটি প্রাথমিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’