বরগুনা জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন অর রশিদকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনার পর ফেসবুক লাইভে এসে মারধরের কারণ জানিয়েছেন অভিযুক্ত শাওন। এ সময় হারুন অর রশিদকে ডাকাত-ধর্ষক বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে শাওন মোল্লা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে এসব অভিযোগ করেন। শাওন মোল্লা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফারুক মোল্লার ছেলে।
শাওন বলেন, বয়স্ক একজন মানুষের সঙ্গে আমার এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি। তবে আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করিনি এবং কোনো ভদ্রলোকের সঙ্গে বেয়াদবি করিনি।
ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, আমার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এটি নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনায় মূল বিষয়টি তুলে ধরতে লাইভে এসেছি। তথাকথিত কমান্ডার রশিদ ওরফে কালা রশিদ, ওরফে ডাকাত রশিদ, ওরফে ধর্ষক রশিদের মুক্তিযুদ্ধে কোনো ভূমিকা ছিল না। উনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার হয়েছেন। তিনি নিজেও টাকার বিনিময়ে যাকে-তাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। উনার অত্যাচারে বরগুনার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অতিষ্ঠ এবং সঠিক মুক্তিযোদ্ধারা লাঞ্ছিত-বঞ্চিত। উনি ডাকাত সর্দার, ভূমি খেকো, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি ও ভিডিও ফুটেজ আছে। সেগুলো আমি পরবর্তীতে আপনাদের সামনে তুলে ধরব এবং আইনের আশ্রয় নেব।
শাওন বলেন, আমি কেনো আইন হাতে তুলে নিলাম, কেনো আমি এমন আচরণ করলাম তার উত্তর আমি আপনাদেরকে দিচ্ছি। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করি এবং বিএনপির একজন ক্ষুদ্র কর্মী। এই ভুয়া রশিদ দম্ভ ভরে প্রকাশ করে আমার মাতৃতুল্য নেত্রীর চরিত্র নিয়ে কথা বলেছেন বিভিন্ন সময়। জিয়াউর রহমানকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা না বরং একজন পাকিস্তানি গুপ্তচর বলে অপমান করেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি এসব বলেছে। তিনি তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়ে বলেছেন, তাদের নাকি জন্মের ঠিক নেই। এমন পরিস্থিতিতে আমি আমার নিজেকে একজন জিয়ার সৈনিক হিসেবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। তাই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় শাওন তার লাইভে বলা কথাগুলো দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদন্ত করে দেখতে বলেন। এছাড়া এসব মিথ্যা হলে আইনে যে শাস্তি আছে তা তিনি মাথা পেতে নেবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, বয়স বিবেচনার একজন কুখ্যাত ডাকাত ও নারী লিপসুর গায়ে হাত তোলা যদি অন্যায় হয়, তাহলে আমি প্রকাশ্যে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাই।
এর আগে, রোববার দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ওই সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন অর রশিদ লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হন। যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, শাওন মোল্লা সাবেক ওই মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে মারধর করছেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শুরু হলে ফেসবুক লাইভে এসে সবার উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন শাওন।
সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে মারধর ও ফেসবুক লাইভের বিষয়ে জানতে চাইলে শাওন মোল্লা বলেন, অনেকেই ডাকাত রশিদকে না চেনে তার লেবাস দেখে পক্ষ নিয়েছেন। উনি খারাপ মানুষ। সমাজের খারাপ মানুষকে প্রতিহত করা একজন নাগরিকের দায়িত্ব।
এই বিষয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন অর রশিদ বলেন, আমাকে মারধর করার পর সবাই যখন আমার পক্ষে নিয়েছে। এখন ফেসবুকে এসে আমাকে আবার ডাকাত বলেছে। আমি এই ঘটনায় মামলা করব।
বরগুনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।