সারা বাংলা

মৃত নবজাতক অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করার অভিযোগ

নিউমোনিয়া রোগের উপসর্গ নিয়ে গতকাল রোববার একদিন বয়সী নবজাতক ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। নবজাতকটির চিকিৎসাও দিচ্ছিলেন ওয়ার্ডটির দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা। একপর্যায়ে মারা যায় সে। তবে, মারা যাওয়ার তথ্যটি গোপন রেখে দায়িত্বরত চিকিৎসক শিশুটিকে অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) এমন ঘটনা ঘটেছে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। 

এদিকে, শিশু মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হলে স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে হট্টগোল হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের কর্মকর্তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় যশোর মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফেরদৌস জাহাঙ্গীরকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মারা যাওয়া শিশু যশোরের নওয়াপাড়া ইউনিয়নের শেখহাটি জামরুলতলা গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও শান্তা ইসলাম দম্পতির ছেলে। 

হাসপাতাল ও শিশুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়িতেই শান্তা ইসলাম একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর শিশুটি অসুস্থ ছিল। স্বজনেরা শিশুটিকে যশোর শহরে বেসরকারি কিংস হসপিটালের চিকিৎসক পলাশ কুমার পালকে দেখান। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং আল্ট্রাসনো করেন। তেমন কোনো রোগ ধরা না পড়ায় সাধারণ নিউমোনিয়া উল্লেখ করে স্বজনদের জেনারেল হাসপাতালে শিশুটিকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।

পলাশ কুমার পালের পরামর্শে রোববার রাতে নবজাতকটিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেন স্বজনরা। এরপর থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা শিশুকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে আসছিলেন।

নবজাতকের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, অনেক অনুরোধের পর রাতে ডাক্তার আফসার আলী এসে নবজাতককে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে যান। ইন্টার্ন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অবহেলার এক পর্যায়ে আজ (সোমবার) ভোর ৫টার দিকে নবজাতকটির মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিশু চিকিৎসক আফসার আলী হাসপাতালে আসেন। নবজাতকের ব্যবস্থাপত্রে ভোর ৫টার দিকে রেফার্ডের বিষয়টি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে স্বজনরা নশিশুটিকে খুলনায় নিয়ে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন বলে ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ করেন চিকিৎসক। এছাড়া, চিকিৎসক আফসার আলী রোগীর স্বজনদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন নবজাতকের স্বজনরা।  

মারা যাওয়া নবজাতকের মা শান্তা ইসলামের অভিযোগ, ‘বয়স বিবেচনা না করে হাই অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ দেওয়ার কারণে আমার সন্তান মারা গেছে। মৃত্যুর পরে চিকিৎসক জীবিত বলে খুলনায় রেফার্ড করেন।’ 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘কতো কষ্ট করে ১০ মাস পেটে রেখে স্বপ্ন দেখেছি। আল্ট্রাসনো করে দেখি ছেলে সন্তান হবে। তারপর বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইতে থাকে। এর মধ্যে সন্তান প্রসব করি। বাড়িতে সবাই খুবই খুশি ছিলেন। অসুস্থ হওয়ায় ডাক্তারের কাছে আনলে আমার সন্তানটি মারা যায়। ডাক্তারা আমার শিশুটিকে ভুল চিকিৎসায় মেরে ফেলেছেন।’

শিশুর বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় সন্তান হারিয়েছি। ডাক্তাররা তাদের দোষ এড়াতে অন্যত্র রেফার্ড করেছেন। এই অপচিকিৎসা ও নবজাতক হত্যার বিচার চাচ্ছি।’

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘নবজাতককে মৃত অবস্থায় খুলনায় রেফার্ড করা হয়েছে এমন অভিযোগ করছেন স্বজনরা। এ বিষয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত শেষে শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’