শ্রমিকদের সুবিধার জন্য তৈরি করা হলেও দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক ছিল বিজিএমইএ পরিচালিত তথ্যভাণ্ডার নিয়ে। শ্রমিকরা অভিযোগ করে আসছিলেন, ওই তালিকায় অনেককেই ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হচ্ছিল। যে কারণে অনেক শ্রমিকই পোশাক কারখানায় চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন।
গত ২৮ আগস্ট পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম এ ‘বিজিএমইএ’র ‘তথ্যভাণ্ডার’ শ্রমিকদের গলার কাঁটা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেড ইউনিয়নগুলোও এই তালিকা বাতিলের দাবি তোলেন। সাম্প্রতিক পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনেও দাবিটি জোরালোভাবে উঠে আসে। এরই জেরে গত সোমবার শ্রমিক-মালিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৈঠক থেকে বিজিএমইএ পরিচালিত তথ্যভাণ্ডারে শ্রমিকদের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার নিয়ম বাতিল করা হয়।
রাইজিংবিডির প্রতিবেদনে উঠে আসে শ্রম আইন অনুযায়ী দাবি দাওয়া জানানো শ্রমিকদেরই মূলত ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হচ্ছিল। শ্রমিকরা বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কোনো কারখানায় চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। তারা কেউ কেউ নতুন কারখানায় যোগ দিলেও আঙুলের ছাপ দেওয়ার পরই তাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছিল। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন তাদের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো উঠে আসে, কোনো কোনো কারখানা নিছক ভুলেও শ্রমিকদের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করছিল। ভুলের বিষয় স্বীকার করে তারা আবার নতুন করে প্রত্যয়ন দিচ্ছিল।
‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার বিষয়টি স্বীকার করেন পোশাক কারখানার মালিক ও বিজিএমইএ নেতারাও। এই তালিকাকে স্পষ্টত মানবাধিকারের লঙ্ঘন উল্লেখ করে এটি বাতিলের দাবি জানান শ্রমিক নেতা, শ্রম অধিকার আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টরা। যদিও বিজিএমইএ বলেছিল, কোনো শ্রমিক বা কর্মচারী কেউ যদি ক্রিমিনাল অফেন্সের সঙ্গে জড়িত থাকেন যেমন- নারী নিপীড়ন, ষড়যন্ত্র, চুরি এবং তা যদি লিগ্যালি প্রমাণিত হয় তবে রিজিওনাল ফ্যাক্টরিগুলোতে তার তথ্য সরবরাহ করা যাবে। যাতে এই ধরনের কর্মকাণ্ড সে করার সুযোগ আর না পায়। তবে, এ নিয়ে প্রতিবাদের জেরে সোমবার এ ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা এলো।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘মজুরি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রায় লাখের ওপরে শ্রমিক ছাটাই হয়েছিল। যার বেশিরভাগ ছিল পুরুষ শ্রমিক। ছাটাই করা শ্রমিকরা কোথাও চাকরি পাচ্ছিল না। বিজিএমইএ সদস্য ভুক্ত কোনো কারখানায় চাকরির জন্য গেলে দেখা যেতো, তার নামে তথ্যভাণ্ডার কিছু নেতিবাচক কথা লেখা আছে। ফলে তার চাকরি হতো না। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকরা বিপাকে ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু দিন আগে রাইজিংবিডি খুব গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি নিয়ে নিউজ করে। এরপর শ্রমিকদের মধ্যে দাবিটা আরও জোরালো হয়। সম্প্রতি যে আন্দোলন সেখানেও এই দাবি জোরালোভাবে উঠে আসে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিজিএমইএ এর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এখন কোনো কারখানায় কালো তালিকা করা হবে না। বিজিএমইএ যে বিষয়টি স্বীকার করলো ও দাবিটি মেনে নিল, এই বিষয়ে রাইজিংবিডির ভালো ভূমিকা ছিল বলে মনে হয়েছে।’
বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) সিনিয়র স্টাফ আইনজীবী সিফাত-ই-নূর খানম বলেন, ‘এ বিষয়টি ভালো খবর। এটা শ্রমিকদের জন্য ভালো। রাইজিংবিডি ছাড়া এই নিউজ নিয়ে সেভাবে কেউ কখনো আসেনি। এটি শ্রমিকদের জন্য খুবই ভালো বিষয়।’
পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের মালিক, শ্রমিকসহ সব পক্ষ বসে কিছু সমস্যার বিষয়ে মৌলিক সমাধানে আসতে পেরেছি। প্রথম ছিল- কোনো শ্রমিকের কালো তালিকাভুক্ত করা যাবে না। এই বিষয়ে মালিক, শ্রমিক সবাই একত্রে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি এটা হয়, আমরা এটি বাতিলে সিদ্ধান্ত নেব।’