শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার সুরাহা না হওয়ায় ঢাকার সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ১৩৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর আগে থেকে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ রয়েছে ৮৬টি কারখানা। বর্তমানে সাভার-আশুলিয়ায় বন্ধ রয়েছে ২১৯টি কারখানা।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাইজিংবিডিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম।
এর আগে, সকালে যথাসময়ে কারখানায় কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কারখানায় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করলে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে অন্য কারাখানাগুলোতেও ছুটি ঘোষণা করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক দিন সাভার-আশুলিয়ার যেসব এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। সেসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় বিভিন্ন কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, এপিবিএন ও পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সড়কে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা।
র্যাব-৪ সিপিসি ২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, পুরো আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে আমাদের টহল চলছে। আশুলিয়া থেকে জিরানী, ডিইপিজেডের পুরো এলাকায় ১৪টি টহল দল ও ৪টি এপিসি কাজ করছে। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এদিকে কারখানা বন্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সঙ্কট সমাধান হবে না বলে মনে করছেন শ্রমিক নেতারা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, কারখানা ১৩ (১) ধারায় বন্ধ দিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না। আলোচনা করতে হবে কারখানা ভিত্তিক।
‘সরকারের শ্রম উপদেষ্টা শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা শুনতে কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির পাশাপাশি যদি একটি কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হতো, যারা শিল্পাঞ্চলে সমস্যা হওয়া কারখানায় যাবে। সেখানে মালিকদের আন্তরিকতার অভাব নাকি শ্রমিকদের দাবি মানার পরও তারা কাজ করছে না, এসব বিষয় বুঝতে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করলে উভয়পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করা যেত। তারপরও যদি শ্রমিকরা কাজ না করতো, তাহলে সমস্যা বলা যেত।’ - যোগ করেন তিনি।
খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, আমার মনে হচ্ছে শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকদের আলোচনায় আন্তরিকতায় ঘাটতি রয়েছে। আর ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে শ্রমিক আন্দোলনকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। কারখানা বন্ধের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের কারখানার সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করা হচ্ছে।
এসপি মো. সারোয়ার আলম বলেন, গতকাল থেকে আমরা মাইকিং করেছি। কথাবার্তা চলছে। শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়, তা নিয়ে কথা হচ্ছে। দাবি দাওয়া নিয়ে যেসব বিরোধ রয়েছে, তা কীভাবে নিষ্পত্তি করা যায় তা নিয়ে কথা হচ্ছে। কলকারখানা অধিদপ্তরের যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন, তাদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে।
তিনি আরও বলেন, আজ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ আছে ৮৬টি কারখানা। এছাড়া ১৩৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যেগুলো খোলা আছে এর মধ্যে কিছু কারখানায় দাবি দাওয়া নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।