গোপালগঞ্জে বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং স্থানীয় জনতার মধ্যে সংঘর্ষে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, তাঁর স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না এবং সময় টিভির ক্যামেরাপার্সন এইচ এম মানিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন।
মারাত্মক আহতদের মধ্যে ১৬ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, তিন জনকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা হাসপাতাল ও তিন জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকী আহতদের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করা হয়।
বিএনপি’র দাবী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যায় জেলা শহরের বেদগ্রাম মোড়ে জেলা বিএনপি আয়োজিত পথসভা শেষ করে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস.এম জিলানীর বাড়ী টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা শহরের বেদগ্রাম মোড়ে পথসভা শেষ করে গাড়ি বহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাসহ কর্মীরা। এ সময় তাদের গাড়ি বহর সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছলে আওয়ামী লীগের ব্যানার ফেস্টুন ছেড়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনগণের সাথে বিবাদে জড়ায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্নাসহ ৩৫ জন আহত হন। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এদিকে সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করতে গেলে সময় টিভির ক্যামেরাপার্সন এইচ এম মানিক আহত হন।
সংঘর্ষের তিন ঘণ্টা পর ঘোনাপাড়া থেকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তার মরদেহ গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। মরদেহ হাসপাতালে নেওয়ার পর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামানসহ বিএনপি’র স্থানীয় নেতাকর্মীরা সেখানে যান।
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সদস্য অ্যাভোকেট তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বোদগ্রামের পথসভা শেষ করে গাড়ি বহর নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস.এম জিলানীর বাড়ী টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন নেতাকর্মীরা। এ সময় গাড়ি বহরে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শহিদুল ইসলাম লেলিন বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে ঘোনাপাড়া মোড়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের স্বেচ্ছাসেক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস.এম জিলানী, তার স্ত্রী রওশন আরা রত্নাসহ অনেকে আহত হয়েছেন।’ গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না বলেন, ‘স্বৈরাচারের দোসররা পরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমার ছোট বাচ্চাদের উপর হামলা করা হচ্ছে। এতে আমাদের অনেক নেতৃবৃন্দ আহত হয়েছেন।’
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, ‘বেদগ্রামের পথসভা শেষে গাড়ি বহর নিয়ে গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছিলেন স্বেচ্ছাসেকদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস.এম জিলানী। এসময় ঘোনাপাড়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহত হন ও অন্তত ৩৫ জন আহত হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশ করবে এজন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশকে জানানো হয়েছে। আমরা আইনশৃংখলা বাহিনীকে জানিয়েই এই সভা করেছি। কিন্তু তারপরেও হামলা ঘটনা ঘটলো। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানাই ‘
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হকের মুঠো ফোনে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস.এম জিলানীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’