ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় টানা বর্ষণে ডুবেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। শহরের কলাতলীসহ প্রধান সড়ক পানি জমেছে। বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, কটেজ জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ফলে হোটেল কক্ষে বসে সময় পার করতে হচ্ছে পর্যটকদের। তবে, অনেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে সময় কাটিয়েছেন।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘আজ ৫ শতাধিক হোটেলে অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক হোটেল কক্ষে অলস সময় কাটাচ্ছেন। ভারী বর্ষণের কারণে তারা হোটেল থেকে কোথাও যেতে পারেননি।’
এদিকে, বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে না নামতে লাল পতাকা উড়িয়েছেন বিচ কর্মীরা। হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিবর্ষণের কারণে অনেক পর্যটক আগাম বুকিং বাতিল করেছেন।
হোটেল সী প্রিন্সেস-এর সিনিয়র অফিসার মাজেদুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘বৃষ্টির পানি সহজেই সাগরে নামতে পারেনি। ফলে হোটেল মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। হোটেল রুমেই সময় পার করেছেন গেস্টরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটিতে কিছু পর্যটক অগ্রীম বুকিং করেছিলেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা বুকিং বাতিল করেছেন।’
কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতার জন্য পাহাড় কাটা এবং অপরিকল্পিত নগরায়নকে দায়ি করেছেন সচেতন মহল। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি সাংবাদিক এইচএম এরশাদ বলেন, ‘অপরিকল্পিত সড়ক উন্নয়ন, আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং পাহাড় কাটার ফলে নালা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ছাড়া এখান ঘেকে উত্তরণ সম্ভব না।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ভারী বর্ষণের ফলে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক, কলাতলী সৈকত সড়কসহ অন্তত ৩৫টি উপসড়ক ডুবে গেছে। বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল।
কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা থেকে আজ শুক্রবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলমান মৌসুমে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।
সৈকত এলাকা সংলগ্ন হোটেল সী প্রিন্সেস হোটেল অবস্থান করা হারুন উর রশিদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে এসেছি। বিকেলে বৃষ্টির জন্য বের হতে পারি নি। আজ অবস্থা আরও খারাপ।’
রহিম উল্লাহ নামে অপর পর্যটক বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজে সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে যাওয়ার চেষ্টা করি। সড়কে এতো পানি ছিল যে সৈকতে যাওয়ার সাহস করিনি। এক প্রকার বাধ্য হয়ে হোটেল কক্ষে সময় পার করছি। ঘুরতে এসে এভাবে আটকে পড়াটা বিরক্তিকর।’
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবারের বৃষ্টি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ঘুরতে না পেরে পর্যটকরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘আজ ৫ শতাধিক হোটেলে অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক হোটেল কক্ষে অলস সময় কাটাচ্ছেন। ভারী বর্ষণের কারণে তারা হোটেল থেকে কোথাও যেতে পারেননি।’
হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ‘ভারী বর্ষণ হলেই হোটেল–মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মূলত বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়। এতে ব্যবসায় যেমন মন্দাভাব দেখা দেয় তেমনি দুর্ভোগে পড়েন পর্যটকরা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।’