ফেনীতে আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সদর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব, সংবাদকর্মীসহ অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছে।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া রাস্তার মাথায় সদর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম ও ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আহসান সুমন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় চারটি মোটরসাইকেলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
আহতরা হলেন, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম (৩০), ছাত্রদল কর্মী মেহেদী হাসান (২৪), ইউনিয়ন তাঁতিদল নেতা আবদুল মোতালেব, ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন সৈকত (২৫), কালিদহ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল আলম সৌরভ (২৪), স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মাঈন উদ্দিন (৪০), সিরাজ (৫০), ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শরীফুল ইসলাম (২৯), স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আক্তার হোসেন শিমুল (৩০), ছাত্রদলকর্মী রিফাউল আলম মজুমদার (১৯), ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আহসান সুমন (২৯), তার ভাতিজা সামি (২০), সংবাদকর্মী এম কাওছার (২১) ও জাহিদুল আলম রাজন (২৬)।
আহতদের মধ্যে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার সংবাদকর্মী কাওছার, ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম, ছাত্রদল কর্মী মেহেদী হাসান, তাঁতিদল নেতা আবুল মোতালেব, ছাত্রদল নেতা সৈকত, সৌরভ ও সিরাজকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে ইউনিয়নের তালতলায় ঘরোয়া বৈঠক করেন সদর উপজেলা ছাত্রদল সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম। বৈঠক শেষ করে যাওয়ার সময় সেখানে হামলা করেন ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আহসান সুমন ও ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিনের লোকজন।
এ সময় হামলায় তিনজন আহত হয়। সেই ঘটনার জের ধরে নজরুল ইসলামের অনুসারী ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শরীফুল ইসলাম ও মোশাররফ হোসেনকে আজ সকালে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় সুমনের লোকজন। এরপর তাকে উদ্ধারের জন্য সদর ছাত্রদল সদস্য সচিব নেতাকর্মীদের নিয়ে ছনিয়া রাস্তার মাথায় অবস্থান নিলে সেখানে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়।
হামলায় আহত ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার বিকেলে ছনুয়া বাজারে একটা সভা করেন নজরুল ইসলাম। সেখানে আমরা উপস্থিত ছিলাম। সভা শেষ করে নজরুল ইসলাম চলে যাওয়ার পর ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন হামলা করে আজিম ও শাকিল নামে দুই কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। আজ সকালে আমাকে ও মোশাররফকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে মারধর করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দিতে পুলিশের কাছে নিয়ে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে নজরুল ভাই ছনুয়া রাস্তার মাথায় তাদের গতিরোধ করলে তারা গাড়ি থেকে নেমে অতর্কিত হামলা করে।’
ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আক্তার হোসেন শিমুল বলেন, ‘আহসান সুমন দলীয় কোনো পদধারী নেতা নয়। উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নজরুল ইসলামের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তিনি আমাদের ওপর হামলা করেছেন।’
আহত সংবাদকর্মী জাহিদুল আলম রাজন বলেন, ‘অস্ত্রসহ দুই সন্ত্রাসীকে এলাকাবাসী আটক করেছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমি ও কাওছার সেখান যাই। ঘটনাস্থল গিয়ে দেখতে পাই দুইজন অস্ত্রধারীকে পুলিশে হস্তান্তরের জন্য বোগদাদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির দিকে নিয়ে যান তারা। এর পেছনে মোটরসাইকেলে ছিলাম আমরা। ছনুয়া রাস্তার মাথায় পৌঁছালে কিছু বুঝে উঠার আগে ১০-১৫ জনের একটা দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে আসামিদের ছিনিয়ে নেয়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় হামলাকারীরা আমাদের ওপর হামলা করে। আমার সহকর্মী কাওছারের মাথায় আঘাত করে এবং আমাকেও মারধর করে। হামলাায় কাওছার গুরুতর আহত হয়েছেন।’
এ ব্যাপারে জানতে আহসান সুমনের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ফেনী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন বলেন, শনিবার বিকেলে ছাত্রদল নেতা নজরুলের ঘরোয়া বৈঠকে হামলা করে আহসান সুমন। আজ সকালে দুইজন কর্মীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করতে গেলে নজরুল বাধা দিলে তার ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। নজরুলসহ ৭ জনকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. রেদোয়ান বলেন, গুরুতর আহত ৭ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে জেলা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।