বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় বিরাজমান করছে। এর প্রভাবে সাতক্ষীরায় গত তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। এ ছাড়া অতিবৃষ্টিতে বিভিন্ন উপজেলার বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও আমন ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগের সবশেষ তথ্যনুযায়ি, এ জেলায় অতিবৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৫ হাজারের বেশি মাছের ঘের ও ৩ হাজারের বেশি পুকুর। এদিকে জোয়ারে নদীতে পানির উচ্চতা বেড়েছে। এতে শ্যামনগর ও আশাশুনির এলাকায় উপকূলের মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।
এদিকে বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিবৃষ্টির কারণে জেলার সব উপজেলাতেই খাল-বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সদ্য রোপণ করা আমন ধান তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়লে ধানের ক্ষেত টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষক। তালা উপজেলার ত্রিশ মাইল এলাকায় রাস্তার উপরে জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে স্থানীয়দের।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া গত তিনদিনে ২০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা চলতি বছরে এ জেলায় সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত। আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে বৃষ্টিপাত কমবে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া অফিস।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক মো.অলিউর রহমান বলেন, বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠসহ অনেক সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষ। এমন অবস্থা যে, চলাচল করতে গিয়ে মানুষ দুর্ঘটনায় পড়ছেন। নর্দমার পানি এত নোংরা যে, পানি মাড়িয়ে রাস্তা পার হলে সঙ্গে সঙ্গে পায়ে চুলকানি শুরু হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিপাতে সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শত শত হেক্টর জমির ঘের, ফসলের ক্ষেতসহ বিভিন্ন জলাভূমি ডুবে গেছে।
বিনেরপোতা, গোপীনাথপুর, মাগুরা, খেজুরডাঙ্গা ও তালতলা এলাকার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। অনেকের বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এলাকার কবরস্থান পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে রয়েছে। রাস্তাও পানির নিচে ডুবে রয়েছে। যাতায়াতে ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন মানুষ। ফসলের মাঠ ও পুকুর পানিতে একাকার হয়ে গেছে।
আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণ দরগাহপুর গ্রামের মৎস্য চাষি বিপ্লব হোসেন ও আব্দুস সাত্তার মোড়ল জানান, তাদেরসহ এলাকায় ছোট বড় হাজারও মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। বসতবাড়ি ও রাস্তার ওপর পানি জমেছে। প্রতিবছরই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। অথচ দেখার কেউ নেই।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.সাইফুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টিতে খাল-বিল সব ডুবে গেছে। সবজি ও আমন ধানের ক্ষেতও ডুবে গেছে। যদি দুই-তিন দিন এভাবে পানির নিচে ধানগাছ তলিয়ে থাকে, তাহলে তা বাঁচানো যাবে না। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার মো. আনিছুর রহমান জানান, গত তিন দিনের বৃষ্টিতে ছোট বড় মিলিয়ে ৫ হাজারের বেশি মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কয়েকটি উপজেলার তথ্য হাতে আসেনি তাদের।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে যেসব এলাকায় জোয়ার-ভাটার ব্যবস্থা নেই, সেসব এলাকায় দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো বাঁধ বৃষ্টিপাতের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ নেই বলে জানান তিনি।