সারা বাংলা

যে গ্রামে বংশানুক্রমিক মাদকের কারবার

চার দশক আগে আব্দুল জব্বারের হাত ধরে রাইগ্রামে শুরু হয় মাদকের কারবার। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে বংশানুক্রমিক তার ছেলে-মেয়েরা কারবার এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। ফেনসিডিল ও গাঁজার পাশাপাশি হিরোইন বিক্রির অন্যতম স্থান হয়ে উঠেছে গ্রামটি। সেই থেকেই গ্রামটি উত্তরাঞ্চলজুড়ে ‘হিরোইন পল্লী’ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। 

স্থানীয়রা জানান, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে রাইগ্রামের অবস্থান। বর্তমানে এই গ্রামের অনেকই মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত। আব্দুল জব্বারের পরিবারের প্ররোচনায় গড়ে উঠেছে মাদকের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ধীরে ধীরে এই মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছেন গ্রামটির কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ।

বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকেই উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা মাদক কিনতে এই গ্রামটিতে আসেন। এই গ্রামের নাম শুনলে কেউ তাদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে চান না বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। 

মাদকের কুফল সম্পর্কে স্থানীয়দের সচেতন করছেন কয়েকজন যুবক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, রাইগ্রামের অনেকই মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন সময়ে যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদের লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে এক-দুইজনকে আটক করলেও তারা জামিনে বের হয়ে আসেন এবং আবারও শুরু করেন মাদকের কারবার। হিরোইন পল্লী গ্রামের নাম শুনলে এই গ্রামে কেউ ছেলে কিংবা মেয়ে বিয়ে দিতে চান না। মাদক কারবারিরা এখানকার পরিবেশ পুরোপুরি নষ্ট করে ফেলেছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, ‘বর্তমানে আব্দুল জব্বারের মেয়ে রত্না, তহমিনা ও ছেলে ফেরদৌস হিরোইনসহ অন্যান্য মাদকের পাইকারি করবার করছেন। এই রাইগ্রামের গাবড়া দুলু মিয়ার ছেলে মেনারুল, হাফিজার মিয়ার ছেলে শাহারুল, হায়দার মিয়ার ছেলে এমরানসহ অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি রয়েছেন। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে সঠিক পুনর্বাসনের মাধ্যমে গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।’ 

রাইগ্রামের যুবক সোহান মিয়া বলেন, ‘বহুবার প্রতিবাদ করেছি। মাদক কারবার বন্ধ করা যায়নি। পুলিশ অভিযান চালালে মাদক কারবারির গা ঢাকা দেন। পরে আবার শুরু হয় কারবার। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক কিনতে আসেন ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সী মানুষ। মাদক কারবারিরা প্রভাবশালী হওয়ায় আগে শক্ত প্রতিবাদ করা যায়নি। আমরা এখন মাইকিং করে মাদকের কুফল সম্পর্কে এলাকার মানুষকে সচেতন করছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আব্দুল জব্বারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

হিরোইন পল্লী সম্পর্কে জানতে চাইলে পলাশবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) লাইছুর রহমান বলেন, ‘রাইগ্রামে কুখ্যাত কয়েকজন মাদক কারবারি আছেন। তাদের গ্রেপ্তার করে মাদক মামলা দিলেও জামিনে বের হয়ে আসেন। তারা আবারও এই মাদক কারবার শুরু করেন। পুলিশের পাশাপাশি আমরা সামাজিকভাবেও স্থানীয় মানুষকে সচেতন করার পরিকল্পনা করেছি। শিগগিরি এলাকাটিকে মাদকমুক্ত করা হবে।’

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল ইসলাম বলেন, “শুনেছি রাইগ্রামকে স্থানীয়রা ‘হিরোইন পল্লী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি নিজেই কমপক্ষে ৪০ বার মাদক কারবারিদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার করেছি। আইনশৃঙ্খলা সভায় বারবার মাদক কারবার বন্ধ করার অনুরোধ করেছি। দ্রুতই ওই এলাকাসহ প্রতিটি মাদকের স্পটে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।’

গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান বলেন, ‘আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষণা করেছি। আগে কী হয়েছে বলতে পারবো না। নতুন করে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।  গ্রামটিতে সভা করে মানুষকে সচেতেন করার কাজ চলছে। খুব শিগগিরি গ্রামটিকে মাদকমুক্ত ঘোষণা করা হবে।’