সারা বাংলা

ছাপাখানার কারিগর থেকে চরাঞ্চলের ত্রাস ‘বিল্লাল চেয়ারম্যান’

উত্তরেও পদ্মা নদী, পূর্বেও পদ্মা নদী। দক্ষিণ পশ্চিমে ফরিদপুর জেলার শেষ সীমানা। কয়েক দশক আগে এমন জায়গায় মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার পদ্মার কোলঘেঁষে গড়ে ওঠে চর, গড়ে ওঠে জনবসতি।

পরে সাধারণ মানুষের সেবার মান নিশ্চিত করতে গড়ে ওঠে আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ। পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সেবায় আব্দুল হালিম চৌধুরী (সুন্দর), রাজ্জাক মোল্লা, আলী আকবর খান, আব্দুল হান্নান মৃধা এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাধারণ মানুষের ভাষ্য, আব্দুল হান্নান মৃধা দায়িত্ব পালনের সময় এ ইউনিয়নে শিক্ষার আলো জ্বলতে শুরু করে। 

তার আগের চেয়ারম্যানদের সময় অন্তত শান্তিতে বেঁচে থাকার পরিবেশ ছিল। তবে ২০১৬ ও ২০২১ সালে মো. বিল্লাল হোসেন এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেন। বিল্লাল চেয়ারম্যানের দখলবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম, মতের অমিল হলে হামলা মামলাসহ একাধিক অনৈতিক কার্যক্রমে সাধারণ মানুষ কোনঠাসা হয়ে পড়েন। 

গত অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে আজিমনগর ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন তিনি। যদিও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগানোর পর থেকেই তার এই ত্রাসের রাজত্ব শুরু হয়। বিল্লালের ত্রাসের রাজত্বে কেউ কথা বলার সাহস পাননি কেউ। তবে গত ৫ আগস্টের পর থেকে মুখ খুলছেন ভুক্তভোগীরা।

সম্প্রতি এমন অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে আজিমনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছেন এ প্রতিবেদক।

চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিল্লাল তার নিজের ভাই ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেন মুসাকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘বিল্লাল বাহিনী’। ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যদের একাংশ তার বাহিনীতে যোগ দেন। আওয়ামী শাসনামলে ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ওপরে ওঠার সিড়ি পান বিল্লাল। এর পাশাপাশি তার ছোট ভাই মোশারফ হোসেন মুসা পান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতির পদ। এরপর দুই ভাই মিলে চরাঞ্চলে গড়ে তোলেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। 

আর এ সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালিত করতো আলমগীর মেম্বার, তারাব আলী মেম্বার, এনায়েত ফকির মেম্বার, মতিয়ার ও আতির নামের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। চরের মাদক সিন্ডিকেটও নিয়ন্ত্রণ করতো এই চক্র। আজিমনগর ইউনিয়নটি পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলে হওয়ায় হবিরামপুর উপজেলা সদর থেকে প্রশাসনিক লোকজনের বেশির ভাগ সময়ই কার্যত পা পড়ে না। ফলে এই বিল্লাল বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকেও বেগ পেতে হয়েছে।

নিজ বাড়িতে টর্চার সেল

আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের একজন গ্রাম পুলিশ শেখ মোহাম্মদ। চেয়ারম্যানের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে চাকরি হারান তিনি। 

তিনি বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন ও তার বাহিনী চরে এমন কোনো অপকর্ম নেই যে করেনি। আমি তার অপকর্মের প্রত্যক্ষদর্শী। আমাকে দিয়েও অনেক অন্যায় অবিচার কাজ করিয়েছেন। বাড়িতে একটি টর্চার সেল বানিয়ে তার অবাধ্য চরাঞ্চলের নিরীহ মানুষজনকে শারীরিক অত্যাচার করা হতো। আমি সবই নিজ চোখে দেখেছি কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। চোখের সামনে তার এই অপকর্ম দেখে আমি চাকরি করবো না বলে তাকে জানিয়ে দিই। তখন চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে বলে, ‘তুই করবি না, তোর বাপে চাকরি করবে’। পরে আমার দুই মাসের বেতন আটকে দেওয়া হয়। উপজেলার নাজিমুদ্দীন স্যারকে বলে আমাকে চাকরি থেকে বাদ দেন। সরকার পতনের পর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আমাকে ডেকে বলে, তোমার চাকরি কেউ খায়নি।’

শিকারীপুরের সৌদি প্রবাসী আলহাজ মোল্লা বলেন, ‘২০২১ সালে আমার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের দাওয়াত করায় বিল্লাল চেয়ারম্যানের লোকজন আমার বাড়িতে ঢুকে হামলা চালিয়ে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এরপর আমাকে চৌকিদার দিয়ে ধরে তার বাড়িতে নিয়ে আয়নাঘরের মতো একটি রুমে ইচ্ছেমতো মারধর করে। চেয়ারম্যান নিজে এবং তার বাহিনীর লোকজন মারতে মারতে আমাকে অচেতন করে ফেলে। পরে আমার আত্মীয়স্বজন উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপতালের নিয়ে যায়। আমার মতো এলাকার যারা বিএনপি করে তাদের ধরে টর্চার সেলে নিয়ে মারধর করতো।’

চরের চারশো বিঘা জমি দখল

চেয়ারম্যান বিল্লাল, তার ভাই মোশাররফ ও তাদের অনুসারীরা মিলে চরাঞ্চলের বিভিন্ন পরিবারের প্রায় চারশ’ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে চাষাবাদ করেন। 

বসন্তপুর এলাকার তাহের মোল্লা বলেন, ‘আমার একটি ৮ বিঘার পুকুরসহ ২৫ বিঘা সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে বিল্লাল চেয়ারম্যান ও তার ভাই মোশারফ হোসেন। পরবর্তী সময়ে আমার বাড়ির পাশে, আমার আরও দেড় বিঘা জমিতে জোরপূর্বক মুরগির ফার্ম দিয়েছে তারা। এতে আমি বাধা দিলে আমাকে আমার বাড়ি থেকে উচ্ছেদসহ এলাকায় থাকতে দেবে না বলে হুমকি দিয়ে আসছে। সরকারের কাছে আমি এর বিচার চাই।’

ইব্রাহিমপুর গ্রামের শহীদ মৃধা বলেন, ‘আমি হাতিঘাটা মৌজায় ১৪/১৫ বিঘা জমিতে বর্গা চাষ করতাম। ২০১৬ সালে বিল্লাল চেয়ারম্যান হওয়ার পর সেসব জমি তার লোকজন দিয়ে দখল করে নেয়। তারপর আমি চলে আসি নছরতপুরের মৌজায়। সেখানেও আমার কটে রাখা ৩৫ বিঘা জমি বিল্লালের ভাই মোশারফ ভোগদখলে নিয়ে যায়। সরকারের কাছে আমার চাওয়া- আমার জমিগুলো চাষাবাদ করার ব্যবস্থা যেন সরকার করে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া আমার পৈতৃক জমিতে ভুট্টা চাষ করলে, সেখানে বছরে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বিল্লাল গং। পরে আমি সুদে ৫০ হাজার টাকা এনে বিল্লাল বাহিনীর সদস্য এনায়েত, আশিক, মতি ও মুসার কাছে দিই। এরপরও তারা বাকি টাকার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছে। তাই আমি মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের কাছে এ বিষয়গুলো তদন্ত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

এনায়েতপুর গ্রামের বৃদ্ধ লাল মিয়া বলেন, ‘বছর তিনেক আগে চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে আমার ছয় বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে। প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো বিচার পাইনি। আমার মতো এলাকার অনেক মানুষকেই সে অত্যাচার করেছে। এলাকার মহিলারাও তার ভয়ে বাড়ির বাইরে বের হতে সাহস পেত না।’

আশ্রয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ভূমিহীনের জমির কাগজ করে দেওয়ার নামে প্রায় ২৫০ জনের কাছ থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা এবং বসন্তপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়ার নামে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নেন বিল্লাল চেয়ারম্যান ও তার ভাই মুসা। অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও ঘর দেননি এবং টাকাও ফেরত দেননি। টাকা চাইলে ভুক্তভোগীদের হুমকি-ধামকি দিতেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো বরাদ্দ না দিয়ে নিজেদের কাজে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করেছেন চেয়ারম্যান।

শিকারপুর আদর্শ গ্রামের ওবায়দুল খান বলেন, ‘বিল্লাল চেয়ারম্যানের ছোটভাই মেশারফ হোসেন মুসা আমার কাছ থেকে ঘরের কথা বলে এক লাখ টাকা দাবি করে। আমি ৭০ হাজার টাকা দিছি। বাকি ৩০ হাজার টাকা ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার পর নেওয়ার কথা। আমাকে ঘরও দেয়নি। টাকাও ফেরত দেয়নি। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি প্রকল্পেও রয়েছে নয়-ছয়ের অভিযোগ। বরাদ্দের অর্থ ঠিকমতো ব্যয় না করে লুটপাত করা হয়েছে।’

হামলা মামলা তার বিশাল বাহিনীর মাধ্যমেই বিরোধী পক্ষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও ভূমি দখল করে আসছেন তিনি। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়লেও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে এতদিন স্থানীয়রা মুখ খোলার সাহস পাননি।

ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. জাহাঙ্গীর শিকদার বলেন, ‘আমার মেম্বারের বয়স দুই বছর ৮ মাস। এই দুই বছর ৮ মাসে একদিনও আমি পরিষদে যেতে পারিনি। পরিষদের কোনো বেতন, রিলিফ, রেশন বা যাই কিছু আইছে আমাকে কোনো খোঁজখবর দেয়নি এবং কোনো মিটিংয়েও আমাকে যেতে দেয়নি। এ ছাড়া চেয়ারম্যান বছরে একটা মিটিংও করেনি। আমি চল্লিশ বছর ধরে একটা জমি চাষ করি। বিল্লালের সন্ত্রাসী বাহিনী সেই জমি দখল করে আমার বাড়ির পালান পর্যন্ত কলাগাছ লাগিয়ে দখলে নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আট বছর ধরে বাড়িতে থাকতে পারিনি। ঘুমাতে পারি নাই। আমার চাকরিজীবী ও ভার্সিটিতে পড়ুয়া দুইটা ছেলেকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকায় ঢুকতে দেয়নি। তাই আমি সরকারের কাছে বিচার চাই, আমার অর্থনৈতিকভাবেও যে জমিগুলা তারা দখল করে নিয়েছে তা যেন আমাকে ফিরিয়ে দেয়।’

৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার শামসুদ্দিন বলেন, ‘আমি বিগত ৩২ বছর মেম্বারি করেছি। গত বছর আমি নির্বাচনে ফেল করি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, আমাদের জালালদি গ্রামের একশ’ পরিবারের ভুট্টার ধরন্ত ফসল এই বিল্লাল বাহিনীর লোকজন লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া বিল্লাল বাহিনীর কাছে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় ছেন (ধারালো অস্ত্র), রাম দা, কুড়ালসহ অস্ত্র আছে।’

মোহাম্মদ আলী নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানা, মানিকগঞ্জ সদর থানা, হরিরামপুর, সাটুরিয়া ও সিংগাইরসহ বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত মামলা দিয়েছে। রাজনৈতিক, চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো মামলা নেই যেটা বিল্লাল চেয়ারম্যান ও তার লোকজন দেয়নি। গত ১৫ বছরে হামলা মামলা দিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে।’

যেভাবে শ্রমিক থেকে কোটিপতি হলেন বিল্লাল 

আজিমনগর ইউনিয়নের পূর্ব আজিমনগর বাইরডাংগি গ্রামের ঘোড়াচালক আলিমুদ্দিন বেপারীর ছেলে মো. বিল্লাল হোসেন। আশির দশকের শেষদিকে নদীভাঙনের কবলে পড়ে আজিমনগর থেকে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চারাখালি গ্রামে বসবাস শুরু করেন। সেখানেও পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়লে ১৯৯৮ সালে আজিমনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান তাদের বসন্তপুর এলাকায় সরকারি কলনিতে একটি ঘর বরাদ্দ দেন। 

বাবা আলিমদ্দিন খেয়া পারাপার ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি চরে ঘোড়ার গাড়িতেও মালামাল বহন করতেন। বিল্লাল হোসেন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে বাবার কাজে সহযোগিতা করতেন। পরবর্তীতে তিনি ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আলী আকবর খানের পুরান ঢাকার ছাপাখানা সুইটি প্রেসে চাকরি নেন। 

কয়েক বছর কাজ করে ছাপাখানার চাকরি ছেড়ে তিনি জর্দ্দার ফ্যাক্টরি দেন। এতে লাভবান না হওয়ায় পরবর্তীতে তিনি স্বর্ণের বক্স তৈরিরও কারখানা দেন বলে জানা যায়। 

পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পদ বাগিয়ে চরাঞ্চলের খাস ও রেকর্ডীয় মালিকানার জমি দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ ভূমিহীনদের কাগজ করার আশ্বাস ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার নামে আদায় করেছেন অর্থ। আওয়ামী শাসনামলের ১৫ বছরে দলীয় পদ লাগিয়ে ও নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান হয়ে ছাপাখানার শ্রমিক থেকে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। 

চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেনের ঢাকার কেরানীগঞ্জে ছয়তলা নিজস্ব বাড়িসহ একাধিক প্লট রয়েছে। এ ছাড়া চরাঞ্চলের বসন্তপুরে সরকারি কলোনির জায়গায় রয়েছে বিলাস বহুল তিনতলা বাড়ি। অশিক্ষিত হলেও অল্প দিনে কোটিপতি বনে যাওয়া বিল্লাল হোসেন চলাফেরা করেন নিজস্ব প্রাইভেট কারে।

বিল্লাল চেয়ারম্যানের ভাই ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন মুসা বলেন, ‘আমি চরে শিকারপুর ও হরিয়া মৌজায় কিছু জমি বর্গা চাষ করি। নছরতপুর মৌজায় আমার কিছু জমি আছে। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা প্রতিহিংসার কারণে আমাদের হয়রানি করতে এসব অভিযোগ করেছেন।’

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কেউ একটা রিপোর্ট দিল না। হঠাৎ করে এতোগুলো অভিযোগ এলো? আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। এগুলো সব অবাস্তব কথা। আমার কোনো জমিজমা নেই, আমার ভাইও এই চরে কোনো জমি চাষাবাদ করে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এসব অভিযোগ উঠেছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ শোনার পর আমরা এসিল্যান্ড এবং কৃষি কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলাম। আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ঘরে সার এবং ভুট্টা পাওয়া গেছে। সেগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য বলা হয়েছে। তাছাড়া ভূমি দেওয়ার অধিকার চেয়ারম্যানের নেই। মানুষজন যদি কোনো টাকা পয়সা দিয়ে থাকে তা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম রয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ইউনিয়নটি দুর্গম চরাঞ্চল হাওয়ায় সেখানে যাওয়া আসায় এক ধরনের সমস্যা। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় প্রশাসনিকভাবে সেখানে তেমন কোনো তৎপরতাও চালানো সম্ভব হয় না। চরে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও সেটি অচল হয়ে পড়ে আছে। এছাড়া চাঁদাবাজির বিষয়ে কোর্টে মামলা করার পরে কোর্ট থেকে নির্দেশনা এলে আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারব।’