মৌলভীবাজার চৌমোহনা চত্বরে প্রতিদিন বসে শ্রম বেচাকেনার হাট। ভোর থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এই হাটে কাজের সন্ধানে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপস্থিতিও বাড়ে। মাটি কাটা, গাছ কাটা, খেত পরিচর্যায় শ্রম বিক্রি করতে এই হাটে তারা উপস্থিত হন। শ্রম কিনতে আসা ব্যক্তিরা দিন চুক্তিতে তাদের নিয়ে যান।
তবে, বন্যার পর এই হাটের দৃশ্যপটে পরিবর্তন এসেছে। খেত-খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শ্রমিকদের কাজে নিতে খুব বেশি মানুষ আসছেন না বলে জানিয়েছেন শ্রম বিক্রি করতে আসা লোকরা। তারা জানান, কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
শ্রমিকরা জানান, অভাব-অনটন ও বন্যার কারণে এখন আগের মতো কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। একদিন কাজ পেলে তিনদিন বসে থাকতে হয়। এখানে আসা অধিকাংশ মানুষ মাটি ও গাছ কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। অনেকে খেত পরিচর্যার কাজেও যান। মূলত, দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে যে কোনো একটি কাজ বেছে নেন তারা।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরের দিকে চৌমোহনা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি থেকে পান্তা খেয়ে শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন সদর উপজেলার একাটুনা গ্রামের আখলিছ মিয়া। তিন মেয়েসহ পাঁচ জনের সংসার চলান তিনি। বন্যার পর থেকে মাসে অল্প কিছু দিন কাজ করে মজুরি হিসেবে যে টাকা পেয়েছেন তা দিয়েই কোনো রকম কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
শ্রম বিক্রি করতে এই হাটে এসেছিলেন হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার বাসিন্দা জাফর আলী। তিনি বলেন, ‘গতকাল কাজ করে ৬০০ টাকা মজুরি পেয়েছি। তিনদিন পর বাড়িতে টাকা পাঠাবো। আরেকটি কাজ না পেলে বিপদে পড়তে হবে। নিজ এলাকায় মজুরি অনেক কম। মৌলভীবাজারে এসেছি বেশি মজুরি পাওয়ার আশায়। আজকাল এখানেও কাজের অভাব। নিয়মিত কাজ পাওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ জনের সংসারে অভাব লেগেই আছে। একদিন কাজ পেলে পরের দুই দিন বসে থাকতে হয়। প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। কষ্টে চলে আমার সংসার।’
মৌলভীবাজার সদরের মাইঝপাড়া গ্রামের রাকিব মিয়া বলেন, ‘মানুষের মধ্যে অভাব দেখা দিয়েছে। আগেরমত কেউ কাজ করাতে চান না। কাজের অভাব দেখা দিয়েছে। আগে এমন সময় খেতের কাজ পাওয়া যেতো। মৌলভীবাজারে বন্যায় খেত নষ্ট হওয়ায় পরিচর্যার কাজ নেই। সংসারে ছয় জন লোক আমার। বড় টানাপোড়নে আছি। চাল কিনলে ডাল কিনতে পারি না।’
শ্রম কিনতে আসা সদর উপজেলার বরমান গ্রামের মোবারক মিয়া বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কাতর হয়ে আছি। বন্যার পানিতে খেত-খামার নষ্ট হয়েছে। বসত বাড়িতে তেমন কাজ নেই। গাছের ডালপালা কাটানোর জন্য একজন শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছি। সবকাজ এখন যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছে। মানুষ যন্ত্রের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। ফলে শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাচ্ছেন।’