দুর্গাপূজা করতে হলে প্রতিটি মন্দিরের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে—এ রকম উড়োচিঠি পেয়েছেন খুলনার দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা। এ কথা প্রশাসন বা সাংবাদিকদের জানালে ‘কচুকাটা’ করা হবে বলে চিঠিতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর থেকে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে।
হুমকির চিঠি পাওয়া মন্দিরগুলো হলো- সুতারখালি দুর্গাপূজা মন্দির, শ্রীনগর মন্দির, রামনগর বীণাপাণি মন্দির ও কালিনগর বাজার সর্বজনীন মন্দির। ডাকে পাঠানো চিঠিগুলো আসে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার। এ ঘটনায় মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
প্রত্যেকটি চিঠি কম্পিউটার কম্পোজড এবং মন্দিরের নামগুলো হাতে লেখা। চারটি চিঠির ভাষা একই। এতে লেখা রয়েছে, শোন এবারে ২০২৪ সালের দুর্গাপূজা করতে হলে তোদের প্রত্যেক মন্দিরের পক্ষ থেকে চাঁদা দিতে হবে পাঁচ লাখ টাকা। তা না হলে তোরা কোনোভাবেই পূজা করতে পারবি না। হানিফের প্রজেক্টে যেমন করেছি, তোদের পরিণতিও তেমন হবে। সমুদয় টাকা এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রস্তুত রাখবি। তোদের কালিনগর বাজারে যেখানে দিতে বলব, সেখানে দিয়ে যাবি। পরে জানাবো সেটা। এসব কথা যদি প্রশাসন মহল, সাংবাদিক বা ভিন্ন কাউকে জানাস তবে তোদের কচুকাটা করবো কথাটা মনে রাখিস। তোদের পরিবারও রেহাই পাবে না। তোদের আশপাশের সকল মন্দিরকেও চাঁদা দিতে বলবি। সব মন্দিরের নাম আমরা জানি না। প্রশাসন আমাদের কেনা। চালাকি করে কোনো লাভ হবে না। টাকা কিন্তু দিতেই হবে। আল্লাহর কসম টাকা না পেলে তোদের কেটে টুকরো টুকরো করব, তোরা আমাদের নজরে আছিস।
দাকোপের একটি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডাকযোগে চিঠি পাওয়ার পর থেকে আমাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। বুধবার চিঠি পাওয়ার পর আমরা রাতে এলাকার মানুষকে নিয়ে সভা করেছি। সেখানে বেশিরভাগ মানুষ পূজা না করার পক্ষে মত দেন। তবু সবাই মিলে পূজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। পাশাপাশি এখন থেকে এলাকায় প্রতিদিন পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে কিছু মন্দির কমিটি পূজা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে।
দাকোপের কামারখোলা সার্বজনীন দুর্গা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শেখর চন্দ্র গোলদার বলেন, এ ধরনের চিঠি পাওয়ার পরে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। আমরা পূজার আয়োজন করব কিনা সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
দাকোপ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় শুক্রবার চারটি মন্দির থেকে জিডি করা হয়েছে। উপজেলার সব মন্দিরের সুরক্ষায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে টহল দিচ্ছে।