গ্রামের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) অনেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষের ভাষা বুঝতে পারেন না। তাই কমিউনিটি ক্লিনিকে সাধারণ বাঙালিদের ওষুধ দেওয়ার পর সবার শেষে তাদের চিকিৎসা করা হয়। এ জন্য সেখানে একজন করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আয়া নিয়োগের দাবি উঠেছে। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীতে সিভিল সার্জনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কয়েকজন এ দাবি করেন।
রাজশাহীর বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব অলান্টারী অর্গানাইজেশন (সিসিবিভিও) সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক ও রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মো. ফারুক।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুরসুনিপাড়া রক্ষাগোলা সমাজ সংগঠনের মোড়ল সুষ্টি টুডু বলেন, ‘আদিবাসীদের অনেকে ঠিকমতো বাংলা বলতে পারে না। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের সবাই বাঙালি। তারা আদিবাসীদের ভাষা কিংবা ভাঙা ভাঙা বাংলা বুঝতে পারেন না। আবার আদিবাসীরাও সব বাংলা বুঝতে পারে না। তাই তাদের মধ্যে কথাবার্তায় সমস্যা হয়। এ জন্য আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে আদিবাসীদের কাউকে ছোট কোনো পদে রাখলেও ভালো হয়। তাহলে দুপক্ষের যোগাযোগই সহজ হবে।’
নিমঘুটু রক্ষাগোলা সমাজ সংগঠনের সদস্য হেনা সরেন বলেন, ‘‘টাইম থাকে ৯টা। কিন্তু সে সময় গিয়ে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকে কাউকে পাই না। বসে থাকি, বসে থাকি, দুপুরে লোক আসে। এরপর বলে, ‘তোমাদের কথা কম বুঝি, আগে ওদের (বাঙালি) দেখি। তোমাদের পরে দেখি’। ওদের ওষুধও বেশি দেয়। আমাদের দেয় কম। এই বৈষম্য দূর করা দরকার। সবাইকে যেন সমান চোখে দেখে, সমান ওষুধ দেয়, এটাই আমার অনুরোধ।’’
রক্ষাগোলার আরেক সদস্য রিতা রানী বলেন, ‘‘দিনের অনেকটা সময় কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকে। খোলা পেলে বলে, ‘মাসের শেষ কিংবা মাসের শুরু, এখন ওষুধ নাই’। আদিবাসীরা এমনিতেই চিকিৎসা নিতে যেতে চায় না। এভাবে ঘুরে এলে পরে আরও যেতে চায় না। তাই পর্যাপ্ত ওষুধ যেন গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দেওয়া হয়, এটাই আমার দাবি।’’
সভায় সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মো. ফারুক বলেন, ‘গ্রামে যে ধরনের রোগের রোগী বেশি আসে, সেই ওষুধ এখন বেশি দেওয়া হচ্ছে। ওষুধের প্যাকেট খোলা হয় কমিটির উপস্থিতিতে। ওষুধ হিসাবের মধ্যেই থাকে। অনেকে কিন্তু যে অসুখ হয়নি, সে অসুখের কথা বলে ওষুধ নিয়ে যায়। ফলে মাসের শেষে ওষুধের ঘাটতি দেখা দেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মাঝে মাঝেই বিনা নোটিশে পরিদর্শনে যাই। সিএইচসিপি-কে না পাওয়া গেলে ওপরে লেখা হয়। অনেকে ঢাকা থেকে মুচলেকা দিয়ে এসেছে যে তারা আর অনুপস্থিত থাকবে না।’
ভাষার সমস্যার বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘সরকারি অর্থায়নে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে স্থানীয় উদ্যোগে সেটা করা যেতে পারে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দানবাক্স আছে। বিনামূল্যে সেবা নেওয়ার পর অনেকে খুশি হয়ে দানবক্সে টাকা দেন। সেই টাকা রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয়। ওই টাকাটা দিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের একজন করে আয়া রাখা যায় কি-না সেটা দেখব। রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকেই আমরা এটা শুরু করতে চাই। এটা করা গেলে একটা মডেল উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ তখন এ উদ্যোগ সারাদেশে ছড়িয়ে দেবে।’
সিসিবিভিওর সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্থার নির্বাহী প্রধান সারওয়ার-ই-কামাল, গোদাগাড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু মাসুদ খান ও রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি সরল এক্কা। সভা পরিচালনা করেন সিসিবিভিওর মনিটরিং ও আইটি কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রশিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা সৌমিক ডুমরী। উপস্থিত ছিলেন সংস্থার কর্মকর্তা মো. আরিফ।