বাড়িতে সাজানো আছে ব্যবহার্য জিনিসপত্র। বিছানা-বালিশ, স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, বইপত্র, খেলার সামগ্রী, জুতা-স্যান্ডেল সবকিছুই সাজানো। তবে, এগুলোর ব্যবহারকারী জুনাইদ ইসলাম রাতুল আর ফিরবে না।
গত ৫ আগস্ট (সোমবার) বিকেলে সরকার পতনের পর আনন্দ মিছিলে গিয়ে বগুড়া সদর থানা এলাকায় পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হয় সে। ৪৯ দিন হাসপাতালে থাকার পর সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে মারা যায় রাতুল।
আরও পড়ুন: ৪৯ দিন পর মৃত্যুর কাছে হার মানলো স্কুলছাত্র রাতুল
পরিবার থেকে জানা গেছে, হাসপাতালে যখন রাতুল চিকিৎসাধীন তখন তার বাবা-মা ও স্বজনরা মিরাকল ঘটবে এমন আশায় ছিলেন। ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর দরবারে দোয়াও করছিলেন তারা। তবে, রাতুল তার শিশু শরীর এবং মাথায় বিদ্ধ শত শত ছররাগুলির ভার বহন করতে পারেনি।
রাতুলের স্কুলের খাতা
মারা যাওয়া জুনাইদ ইসলাম রাতুল বগুড়া শহরের হাকির মোড় ঘোনাপাড়া এলাকার মুদি দোকানদার জিয়াউর রহমানের ছেলে। সে উপশহরে অবস্থিত পথ পাবলিক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
রাতুলের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ছেলেটাকে অনেকবার নিষেধ করেছিলাম এরকম সময় (৫ আগস্ট) বাইরে না যাওয়ার জন্য। এরপরেও সে মিছিলে গেলো। পুলিশের গুলি খেলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাতুল গুলি খাওয়ার পর একটা লোক তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ওকে ভর্তি করা হয়। তারপর ছেলের কাছ থেকেই নম্বর সংগ্রহ করে নিয়ে আমাকে ফোন দিলে আমি হাসপাতালে যাই। রাতুলকে হাসপাতালের চার তলায় ভর্তি করানো হয়েছিলো। এরপর ডাক্তাররা সিটিস্ক্যান করে দেখলো তার মাথার ভেতর গুলি। এরপর তারা রাতুলকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। রাতুলকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয় সেদিন রাতেই।’
রাতুলের ঘর
রাতুলের বাবা বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসকরা খুব যত্নের সঙ্গে আমার ছেলের চিকিৎসা করেছে। সরকারও চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদেরকে সাহায্য করেছে। আমার সন্তান পৃথিবীর বুকে আর নেই। তাকে আর ফিরে পাচ্ছি না। এটাই আমার বড় দুঃখ।’
জিয়াউর রহমান বলেন, ‘রাতুল ফুটবল খেলা, সাইকেল চালানো এবং স্কেটিং করতে খুব পছন্দ করতো। পড়ালেখাতেও খুব ভালো ছিল। বইয়ে একবার কিছু পড়লে দ্বিতীয়বার পড়তে হতো না। যা পড়তো তাই তার মনে থাকতো।’
তিনি বলেন, ‘রাতুলকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো। তাকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন ছিল। তার চলে যাওয়ায় আমদের সব আশা শেষ হয়ে গেলো।’
রাতুলের বোনের শ্বশুর আব্দুর রহমান বলেন, ‘রাতুলের ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম ছিলো। হাসপাতালে ভর্তি করার পর ডাক্তাররা আমাদের এমনটিই জানিয়েছিলেন। যদি সে বেঁচে থাকে তাহলে সে দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলতে পারে। আমরা আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বাইরের দেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। যদিও ডাক্তাররা এমনটি আমাদেরকে কনফার্ম করেননি যে বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালেই রাতুল সুস্থ্য হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাতুল ১ মাস ১০ দিনের মতো কোমায় ছিলো। তিনদিন আগে সে কোমা থেকে বেরিয়ে আসে। সে গতকাল রোববার কথা বলেছে। মুখে খাবার খেয়েছে। সেই ছেলে আজকে মারা গেলো। রাতুলের চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হয়নি। চিকিৎসক, ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার সমন্বয়ক, সরকার এবং আত্মীয়-স্বজন সবাই রাতুলের চিকিৎসায় সহযোগিতা করেছেন।’